ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় তাউতে সোমবার সন্ধ্যায় আঘাত হেনেছে ভারতের গুজরাট উপকূলে।
দেশটির আবহাওয়া দপ্তরের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই ঘণ্টার মধ্যে পোরবন্দর ও মাহুভা অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে ঝড়টি। এসময় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১৫৫-১৬৫ কিলোমিটার।
ঝড়ের আঘাতে মহারাষ্ট্রে প্রাণ গেছে অন্তত ছয় জনের। কর্নাটকের উপকূলে প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে আট জন। রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তথ্যমতে সাত জেলার ১২১টি গ্রাম থেকে ঝড়ের তাণ্ডবে বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
মুম্বাইতে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১৪ কিলোমিটার। এসময় ঝড়োবাতাসসহ ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে।
মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অন্তত ৫৫টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১১টা পর্যন্ত বেসামরিক বিমান চলাচলও বন্ধ থাকবে।
মুম্বাই উপকূলে দুটি নৌযানে আটকে পড়া অন্তত চার শতাধিক যাত্রী ও ক্রুকে উদ্ধারে মোতায়েন করা হয়েছে তিনটি যুদ্ধজাহাজ।
এর আগে, পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনীর একটি দল।
ঝড় পরবর্তী টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ও যান চলাচল সচল করতে সেনাবাহিনীর দলটি প্রশাসনের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় দেয়া সব ধরনের স্বাস্থ্যবিষয়ক নির্দেশনা মেনেই উদ্ধার কাজ চালানো হবে।
দেশটির আবহাওয়া দপ্তর জানায়, রাজ্যের একাধিক স্থানে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এসময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যাবে বলে আবহাওয়া বার্তায় জানানো হয়েছে। এতে বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছপালা উপড়ে যেতে পারে।
উপকূল থেকে এক লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে এরিই মধ্যে অন্তত ২১ জেলায় শুরু হয়ে গেছে বৃষ্টিপাত।
ঘূর্ণিঝড় তাউতে
দেশটির আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আরব সাগরে ঘনীভূত নিম্নচাপটি শক্তিশালী হয়ে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।
‘তাউতে’ নামটি মিয়ানমারের দেয়া। এর অর্থ হল অতি উচ্চ স্বরযুক্ত টিকটিকি।
চলতি মৌসুমে ভারতে এটিই প্রথম ঘূর্ণিঝড়। এর তীব্রতা গত বছরের সুপার সাইক্লোন আমফানের মতো হবে কিনা তা জানা যায়নি। চলতি বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়াসহ প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে লাক্ষাদ্বীপ, কেরল, কর্নাটক, গোয়া, মহারাষ্ট্র, গুজরাটসহ একাধিক উপকূলবর্তী এলাকায়।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুতি যাচাইয়ে শনিবার বিশেষ বৈঠকে করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কেন্দ্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি।
ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্র, ত্রাণ সামগ্রীসহ উদ্ধারকাজের প্রস্তুতি যাচাই করে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। কেরল, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে জাতীয় বিপর্যয় মেকাবিলা বাহিনীর ৫০টিরও বেশি দল মোতায়েন করা হয়েছে।
ভারী বৃষ্টি ও ধস হতে পারে গুজরাটের বিভিন্ন উপকূলবর্তী অঞ্চলে। লাক্ষাদ্বীপের নিচু এলাকাগুলি প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের ফলে তামিলনাড়ু ও রাজস্থানের বিভিন্ন অঞ্চলেও বৃষ্টি হতে পারে। শুক্রবার ভারী বৃষ্টির ফলে কেরলের কোচিতে উদ্ধারকারী দল নামানো হয়েছিল।
শুক্রবার পর্যন্ত লাক্ষাদ্বীপের ওপর এই নিম্নচাপ অবস্থান করলেও শনিবার তা গুজরাট উপকূলের দিকে সরতে শুরু করে।
তাদের প্রকাশিত বুলেটিনে জানানো হয়েছে, আগামী ১৬ থেকে ১৯ মে’র মধ্যে আরব সাগরের ওপর তৈরি হওয়া এই নিম্নচাপ অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। সেই সময় বায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার হতে পারে।
মৌসম ভবন শুক্রবারই জানায়, বর্তমানে আরব সাগরে যে আবহাওয়া রয়েছে, তা নিম্নচাপকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত করার জন্য যথেষ্ট। আগামী ১৭ মে তা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। পরদিনই গুজরাট উপকূল অতিক্রম করে তা পাকিস্তানে প্রবেশ করবে।
ইতিমধ্যেই কোঙ্কন উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আগামী ১৭ মে পর্যন্ত মৎসজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে কোস্টগার্ডকেও।
নিম্নচাপের প্রভাবে শনিবার থেকেই কেরল ও কর্নাটকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এতে কেরলে সর্বোচ্চ সতর্কতা (লাল) জারি করা হয়েছে।
রোববার পর্যন্ত অতি ভারী বৃষ্টি ও ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে কেরল, কর্নাটক ও গোয়ার একাধিক জেলায়। সৌরাষ্ট্র, কচ্ছসহ গুজরাটের একাধিক এলাকায় মঙ্গল বা বুধবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।