বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মোদি ‘নিখোঁজ’, থানায় রিপোর্ট

  •    
  • ১৭ মে, ২০২১ ১৫:৫৫

মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কায় বিপর্যস্ত ভারতে এ বছরের শুরুতেও মোদির জনসমর্থন ছিল ৮০ শতাংশের বেশি। কয়েক মাসের ব্যবধানেই জনসমর্থন তলানিতে ঠেকেছে। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হওয়ার সঙ্গে প্রশ্ন বাড়ছে তার নেতৃত্ব নিয়ে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার মন্ত্রিসভার ১০ সদস্য নিখোঁজ হয়েছেন মর্মে থানায় রিপোর্ট করেছেন সর্বভারতীয় ছাত্র ইউনিয়নের এক নেতা।

নাগেশ কারিয়াপ্পা নামের ওই নেতা বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশ যখন মুখ থুবড়ে পড়েছে, তখন দেখা নেই সরকারপ্রধান ও তার শিষ্যদের।

দিল্লির একটি থানায় গত শুক্রবার নিখোঁজের রিপোর্ট করে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন নাগেশ।

মহামারিতে দেশের নেতৃত্বের ঝাণ্ডাধারীরা মুখ লুকিয়ে আছেন বলে ক্ষোভ জানান নাগেশ।

তিনি বলেন, ‘যারা দেশকে বিশ্বনেতৃত্বের মঞ্চে এক নম্বরে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন, এখন তারা কোথায়...?’

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কায় বিপর্যস্ত ভারতে এ বছরের শুরুতেও মোদির জনসমর্থন ছিল ৮০ শতাংশের বেশি। কয়েক মাসের ব্যবধানেই জনসমর্থন তলানিতে ঠেকেছে। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হওয়ার সঙ্গে প্রশ্ন বাড়ছে তার নেতৃত্ব নিয়ে।

নজিরবিহীন ক্ষোভের মুখে পড়েছেন মোদি। শুধু জনগণের মধ্যে নয়, ক্ষোভ ছড়িয়েছে তার দল ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি)।

করোনায় প্রাণহানিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পরের অবস্থান ভারতের। দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা পৌনে তিন লাখের কাছাকাছি।

শনাক্তের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ ভারত। দেশটিতে এ নিয়ে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে আড়াই কোটি মানুষের দেহে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সোমবারের আপডেটে জানানো হয়, আগের ২৪ ঘণ্টায় ভারতে তিন লাখ ১১ হাজার মানুষের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। মৃত্যু হয় চার হাজার ৭৭ জনের।

ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে করোনার টেস্ট কিট, ওষুধ, অক্সিজেনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের। রোগীর বিপরীতে স্বাস্থ্য খাতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক লোকবল সংকট।

মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হতে থাকায় শ্মশান, কবরস্থানগুলোতেও স্বজনদের মরদেহ নিয়ে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে।

অরাজক পরিস্থিতিতে সৎকারের খরচ তিন গুণ বেড়ে ১৫ হাজার রুপি ছাড়িয়েছে অনেক জায়গায়। সৎকার ছাড়াই নদীতে ভাসিয়ে অথবা মাটিচাপা দেয়া হচ্ছে অনেক মরদেহ।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর কনটেম্পোরারি সাউথ এশিয়ার পরিচালক আশুতোষ বর্ষণ বলেন, ‘গণদুর্ভোগের তীব্রতাই মোদির ভাবমূর্তির প্রতিফলন। নিজের ভাবমূর্তি তিনি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন কি না, সেটি পরের প্রশ্ন। কিন্তু এর মাশুল যে অদূর ভবিষ্যতে তাকে গুনতে হবে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।’

তিনি আরও বলেন, “পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে এখন তার ‘এসব ভগবানের ইচ্ছা’ কিংবা ‘মানুষ মাস্ক পরেনি বলে এমন সংকট’-এর মতো বক্তব্যগুলো জনগণ আর বিশ্বাস করার অবস্থাতে নেই।”

বিজেপিশাসিত রাজ্য হরিয়ানার পঞ্চকুলা শহরে করোনায় মৃত বাবার সৎকার করছিলেন চেতন টিকু নামের এক যুবক। দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর বাবার সৎকার করতে পেরেছেন তিনি।

চেতন বলেন, ‘সরকারের ব্যর্থতার ফলই দেখছি এখানে। একটা মানুষও পাবেন না যে ক্ষুব্ধ নয়। রাজ্য সরকার বলুন বা কেন্দ্রীয় সরকার, তাদের সমন্বিত ব্যর্থতার ফল এটি। আজেবাজে পরিকল্পনা করেছে। এ রকম সময়ে নির্বাচন দেয়া সবচেয়ে জঘন্য সিদ্ধান্ত ছিল।’

মহামারির বাস্তবতা উপেক্ষা করে পাঁচ রাজ্যে মাসব্যাপী বিধানসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ, প্রচারণা ও জনসমাবেশ, হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব কুম্ভমেলায় কোটি মানুষের অংশগ্রহণের পরপরই অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে শুরু করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ।

হরিয়ানার মানকিয়ান গ্রামের বাসিন্দারা বিজেপিকেই ভোট দেয় গত নির্বাচনে। এখন সেখানে তীব্র হচ্ছে মোদিবিরোধী ক্ষোভ। সম্প্রতি বিজেপির রাজনীতিকদের গ্রামটিতে ঢুকতেও দেয়নি বাসিন্দারা।

পাশের রামগড় গ্রামের অটোরিকশার চালক করমচাঁদ সিং বলেন, ‘মহামারির মধ্যে উপার্জন বন্ধ। ২০১৯ সালে মোদিকে ভোট দিয়েছিলাম। এখন আর বিশ্বাস করি না তাকে। দেখুন কত মানুষ মরছে।’

২০১৪ সালে সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের আশ্বাস দিয়ে প্রথম ক্ষমতায় আসেন মোদি। ২০১৯ সালের নির্বাচনেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তার দল। একের পর এক নাগরিক আন্দোলন, অর্থনৈতিক সংকট, সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ সত্ত্বেও চলতি বছরের শুরুতেও ৮০ শতাংশ জনসমর্থন ছিল তার।

কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসা ছাড়াই যখন প্রিয়জনের অসহায় মৃত্যুর সাক্ষী হচ্ছেন স্বজনরা, অক্সিজেনের জন্য হাহাকার আর ভারতের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম, তখন প্রথমবারের মতো দেশজুড়ে নেতৃত্বের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে মোদি।

চলতি সপ্তাহেই দিল্লিজুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়া হাজারো মানুষের স্লোগান ছিল, ‘মোদি, আমাদের সন্তানদের টিকা না দিয়ে বিদেশে কেন টিকা পাঠালেন আপনি?’

ওই বিক্ষোভে অংশ নেয়া অন্তত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চলতি মাসে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চে ভাইরাসের ব্যাপকতা এবং দেশজুড়ে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে আগেই সরকারকে সতর্ক করেছিল স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের নিয়ে সরকারগঠিত একটি উপদেষ্টা ফোরাম। সে সতর্কতা উপেক্ষা করে কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞানীদের এ সতর্কতা মোদি সরকার শুনেও না শোনার ভান করেছিল বলেই ভারতে মহামারি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে জোরালো হচ্ছে অভিযোগ।

এ বিভাগের আরো খবর