ভারতের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘টাউকটে’। ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে এই ঝড় আছড়ে পড়তে পারে গুজরাটের উপকূলে।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আরব সাগরে নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়েছে। শক্তি বাড়িয়ে সেই নিম্নচাপই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে আগামী মঙ্গলবার বা বুধবার আছড়ে পড়তে পারে।
‘টাউকটে’ নামটি মিয়ানমারের দেয়া। এর অর্থ হল অতি উচ্চ স্বরযুক্ত টিকটিকি।
চলতি বছরে ভারতে এটিই প্রথম ঘূর্ণিঝড়। এর তীব্রতা গত বছরের সুপার সাইক্লোন আমফানের মতো হবে কিনা তা জানা যায়নি। চলতি বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়াসহ প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে লাক্ষাদ্বীপ, কেরল, কর্নাটক, গোয়া, মহারাষ্ট্র, গুজরাটসহ একাধিক উপকূলবর্তী এলাকায়।
এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি যাচাইয়ে শনিবারই বিশেষ বৈঠকে করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কেন্দ্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি।
ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্র, ত্রাণ সামগ্রীসহ উদ্ধারকাজের প্রস্তুতি যাচাই করে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। কেরল, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে জাতীয় বিপর্যয় মেকাবিলা বাহিনীর ৫০টিরও বেশি দল মোতায়েন করা হয়েছে।
রোববার পর্যন্ত কেরল, কর্নাটক ও গোয়ার উপকূলের জেলাগুলোতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি ও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
ভারী বৃষ্টি ও ধস হতে পারে গুজরাতের বিভিন্ন উপকূলবর্তী অঞ্চলে। লাক্ষাদ্বীপের নিচু এলাকাগুলি প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের ফলে তামিলনাড়ু ও রাজস্থানের বিভিন্ন অঞ্চলেও বৃষ্টি হতে পারে। শুক্রবার ভারী বৃষ্টির ফলে কেরলের কোচিতে উদ্ধারকারী দল নামানো হয়েছিল।
শুক্রবার পর্যন্ত লাক্ষাদ্বীপের ওপর এই নিম্নচাপ অবস্থান করলেও শনিবার তা গুজরাট উপকূলের দিকে সরতে শুরু করে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই নিম্নচাপ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলেই জানিয়েছেন আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তারা।
তাদের প্রকাশিত বুলেটিনে জানানো হয়েছে, আগামী ১৬ থেকে ১৯ মে’র মধ্যে আরব সাগরের ওপর তৈরি হওয়া এই নিম্নচাপ অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের আকার ধারণ করতে পারে। সেই সময় বায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার হতে পারে।
মৌসম ভবন শুক্রবারই জানায়, বর্তমানে আরব সাগরে যে আবহাওয়া রয়েছে, তা নিম্নচাপকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত করার জন্য আদর্শ। আগামী ১৭ মে তা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। পরদিনই গুজরাট উপকূল অতিক্রম করে তা পাকিস্তানে প্রবেশ করবে।
ইতিমধ্যেই কোঙ্কন উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আগামী ১৭ মে পর্যন্ত মৎসজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তৈরি রাখা হয়েছে উপকূলরক্ষী বাহিনীকেও।
নিম্নচাপের জেরে শনিবার থেকেই কেরলে বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে বলে জানানো হয়েছিল। এর মধ্যেই কেরল ও কর্নাটকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ফলে কেরলে সর্বোচ্চ সতর্কতা (লাল) জারি করা হয়েছে।
রোববার পর্যন্ত অতি ভারী বৃষ্টি ও ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে কেরল, কর্নাটক ও গোয়ার একাধিক জেলায়। সৌরাষ্ট্র, কচ্ছসহ গুজরাটের একাধিক এলাকায় মঙ্গল বা বুধবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।