করোনার আতঙ্কে স্বজনরা পাশে দাঁড়াননি। ঈদের উৎসব বাতিল করে মৃতদেহ সৎকারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে অনন্য মানবিকতার নজির সৃষ্টি করলেন হুগলি জেলার পোলবা দাদপুর ব্লকের পশ্চিম পাড়ার আশিক মোল্লা, গোলাম সাব্বারা, গোলাম সুবানি, শেখ সানিরা।
পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার দাদপুরের ৭২ বছরের হরেন্দ্র সাধুখাঁ কিছুদিন ধরে জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগছিলেন। চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে কিছুদিন ওষুধ খেয়ে সুস্থ হয়েও গিয়েছিলেন।
কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে আচমকা মৃত্যু হয় তার। হৃদরোগে মৃত বলে চিকিৎসক সার্টিফিকেটও দেন। কিন্তু যেহেতু চন্দনের বাবার সর্দি-কাশি, জ্বর হয়েছিল, তাই সংক্রমণের আশঙ্কায় স্বজন ও পড়শিদের কেউই মৃতদেহ সৎকারে এগিয়ে আসেননি। বাড়িতেই পড়ে থাকে মৃতদেহ। সৎকার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন বৃদ্ধের সন্তান চন্দন।
বাড়িতে স্ত্রী, সন্তান এবং মা রয়েছেন। বাবার মৃতদেহ কীভাবে শিরপুর শ্মশানে নিয়ে যাবেন ভেবে দুশ্চিন্তায় পড়েন। চন্দন বলেন, ‘বাবা কিছুটা সেরে ওঠায় ডাক্তারবাবু করোনা পরীক্ষার কথা বলেননি। বাবার হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে, ডাক্তার ডেথ সার্টিফিকেটে লিখেছেন।
তবুও কেউ মৃতদেহ সৎকারে পাশে দাঁড়ালেন না। আশিক, সাব্বাররা এগিয়ে না এলে কী করতাম জানি না।’
একই পাড়ার বাসিন্দা মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ কেউ চন্দনের বন্ধু, কেউ বড় দাদার মতো। শুক্রবার সকালে নামাজ পড়ে ঈদের উৎসবে যোগ না দিয়ে সোজা চলে আসেন চন্দনের বাড়িতে। কাঁধে তুলে নেন মরদেহ।
শ্মশানে দাঁড়িয়ে থেকে মরদেহ সৎকারে সাহায্য করেন তারা। দেহ সৎকার সম্পন্ন করে আশিক বলেন, ‘মানুষ যদি মানুষের পাশে না দাঁড়ায়, তাহলে জীবনের কোনো দাম নেই।’
মুসলিম সম্প্রদায়ের বড় উৎসব ঈদ। সেই উৎসবের আনন্দ ত্যাগ করে অসহায় পুত্রের পাশে দাঁড়াতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি সানিরা। অন্তত ১৫ জন মিলে এই সৎকারে সহযোগিতা করেন।
চন্দন বলেন, আমি ওদের কাছে কৃতজ্ঞ। একটা অভিজ্ঞতা হলো, বিপদে পড়লে কাছের মানুষ কেউ পাশে থাকে না।’
গোলাম সুবানি বলেন, ‘এক মাস ধরে রোজার পরেই ঈদ। ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের উৎসবে মেতে ওঠার দিন। এবার মাতলাম না । মানুষের উপকারে তো লাগতে পারলাম । সেটাও ভ্রাতৃত্ব বোধ থেকেই।’