পূর্ব জেরুজালেমে সহিংসতা ও উত্তেজনা প্রশমনে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের কট্টর ইসলামপন্থি সংগঠন হামাসকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘ।
বিবদমান দুই পক্ষের উদ্দেশে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এ আহ্বান জানানো হয় বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, হামাসকে শিগগিরই ইসরায়েলে রকেট হামলা বন্ধ করতে হবে। সব পক্ষকে সহিংসতা কমাতে হবে।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জেন সাকি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জেরুজালেমে চলমান সহিংসতার বিষয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক র্যাব টুইট বার্তায় বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর রকেট হামলা বন্ধে দুই পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।
ইইউর পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেফ বোরেল বলেন, পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেমে সহিংসতা দ্রুত থামানো জরুরি।
তিনি বলেন, ‘গাজা থেকে ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে রকেট হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয়ের মুখপাত্র রুপার্ট কোলভিল বলেন, সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সংস্থাটি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি সহিংসতা ও জাতিগত বিভক্তির উসকানিদাতাদের প্রতি নিন্দা জানানো হচ্ছে।
পূর্ব জেরুজালেমে সহিংসতার বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সোমবার জরুরি বৈঠকের ডাক দেয়। তবে বৈঠকের পরে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
ফিলিস্তিনের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ইসরায়েল ও হামাসের বিরোধ নিয়ে মধ্যস্থতাকারী জাতিসংঘ, মিসর ও কাতারও দুই পক্ষের লড়াই থামানোর চেষ্টা করছে।
সোমবার রাত থেকে তিন শর বেশি রকেট ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ করে হামাসের বিদ্রোহীরা। এতে ৩১ ইসরায়েলি আহত হয়।
অন্যদিকে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়, গাজার ১৩০টি স্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় ৯ শিশুসহ ২৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
রকেট হামলার বিষয়ে হামাস জানিয়েছে, সোমবার জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হয়। ইসরায়েলের আগ্রাসন ও সন্ত্রাসবাদ থেকে আল-আকসা মসজিদ রক্ষায় ইসরায়েলে হামলা চালানো হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে প্রথমবার জেরুজালেমের দিকে রকেট ছোড়ার মধ্য দিয়ে ‘লাল সীমানা অতিক্রম’ করেছে হামাস। ইসরায়েল সর্বশক্তি দিয়ে এর জবাব দেবে।
২০১৭ সালের পর গত শুক্রবার থেকে ভয়াবহ সহিংসতার মধ্যে জেরুজালেমবাসী। এর সূত্রপাত হয় পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জাররাহ এলাকা থেকে ফিলিস্তিনি কয়েকটি পরিবারকে তাদের বাড়ি-ঘর থেকে উচ্ছেদে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের পক্ষে ইসরায়েলের হাইকোর্ট রায় দিলে।
পবিত্র রমজান মাসজুড়ে এ নিয়ে ওই অঞ্চলে চলে ব্যাপক উত্তেজনা। শুক্রবার রাতে আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী হানা দিলে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়।
সোমবার ভোরে ফজরের নামাজের সময় জেরুজালেম দিবস উপলক্ষে ইসরায়েলিদের শোভাযাত্রা শুরুর আগে আল-আকসা মসজিদে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট নিয়ে অতর্কিতে নিরস্ত্র মুসল্লিদের ওপর হামলে পড়ে জায়নবাদী রাষ্ট্রটি। চারদিনের সংঘর্ষে আহত হয় পাঁচ শর বেশি ফিলিস্তিনি।