কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণে ভারত সরকারের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে চিকিৎসাবিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে। ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার কোভিড মহামারি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করার চেয়ে টুইটার থেকে সমালোচনামূলক বার্তাগুলি সরিয়ে ফেলতে বেশি তৎপর ছিলেন।
সংকট চলাকালীন সমালোচনা ও মুক্ত আলোচনাকে প্রশ্রয় না দিয়ে মোদির পদক্ষেপগুলি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ বলে মন্তব্য করা হয়েছে সম্পাদকীয়তে।
ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের উদ্ধৃতি দিয়ে এই সম্পাদকীয়তে অনুমান করা হয়েছে যে ভারতে আগামী ১ আগস্টের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণে এক কোটি মানুষের মৃত্যু হবে। জার্নালটির সম্পাদকীয় বলে হয়েছে, যদি এই অনুমান বাস্তবে ঘটে, তবে মোদি সরকার স্বেচ্ছা-আরোপিত জাতীয় বিপর্যয়ের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দায়বদ্ধ থাকবে।’
সম্পাদকীয়টিতে বলা হয়েছে, ‘ব্যাপক সংক্রমণের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও, সরকার ধর্মীয় উৎসবগুলোকে চলতে থাকার অনুমতি দিয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার অভাবের মধ্যেই দেশব্যাপী লাখো মানুষকে বিশাল রাজনৈতিক সমাবেশের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। ‘ধ্বসে যাওয়া স্বাস্থ্য অবকাঠামোর বিষয়ে আলোকপাত করে সম্পাদকীয়তে সংকট মোকাবিলায় সরকারের আত্মতুষ্টিরও সমালোচনা করা হয়েছে।
দ্য ল্যানসেটের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে , ‘ভারতে স্বাস্থ্যখাতে দুর্ভোগের চিত্রগুলো বোঝা খুব শক্ত নয়, হাসপাতালগুলোতে উপচে পড়া ভিড় এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা ক্লান্ত হয়ে সংক্রমিত হয়ে পড়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন, হাসপাতালের শয্যা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস চেয়ে মরিয়া মানুষের (চিকিৎসক এবং জনগণ) আবেদনে পূর্ণ।
যদিও মার্চের শেষের দিকে কোভিড-১৯ -এর দ্বিতীয় তরঙ্গ শুরুর আগে, ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ঘোষণা দিয়েছিলেন যে ভারত মহামারির ‘শেষ’ পর্যায়ে রয়েছে। বলা হয়েছে , ‘দ্বিতীয় তরঙ্গের বিপদ এবং নতুন স্ট্রেইনের উদ্ভবের বারবার সতর্কবার্তা দেওয়া সত্ত্বেও ভারতে বেশ কয়েক মাসে সংক্রমণ কমে যাওয়ায় সরকারের ধারণা হয়েছিল, কোভিড-১৯ সংক্রমণকে রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
সংক্রমণের প্যাটার্ন (ধরণ) চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে ভুল পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে, ভারতে প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে গেছে , যা আত্মতৃপ্তি এবং অপর্যাপ্ত প্রস্তুতিকে উৎসাহিত করে। অথচ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ গত জানুয়ারিতে একটি সেরোসার্ভেতে জানিয়েছিল যে, জনসংখ্যার মাত্র ২১% মানুষের শরীরে কোভিড প্রতিরোধক অ্যান্টিবডি রয়েছে।’
সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে যে, ভারত কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে তার প্রাথমিক সাফল্যগুলিকে নিয়ে এতটাই বিভ্রান্তির মধ্যে ছিল যে এপ্রিল পর্যন্ত, সরকারের কোভিড-১৯ টাস্কফোর্স কয়েকমাসে একবারও মিলিত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন দ্য ল্যানসেটের এই সম্পাদকীয় কোভিড বিরোধী লড়াইয়ে ভারতের ভাবমূর্তিকে অনেকটাই ম্লান করবে।