বোমা হামলায় আহত মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্টের বর্তমান স্পিকার মোহাম্মদ নাশিদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মাথা, বুক, তলপেটসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বেশ কয়েকটি অস্ত্রোপচার হয়েছে তার।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, এডিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোহাম্মদ নাশিদ। তার দেহে সবগুলো অস্ত্রোপচারই এখন পর্যন্ত সফল হয়েছে বলে শুক্রবার বিকেলে নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
১৬ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর নাশিদের সুস্থ হতে অনেকটা সময় লেগে যাবে বলে জানিয়েছেন তার ভাই নাজিম সাত্তার।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানী মালেতে নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়িতে ওঠার সময় হামলার শিকার হন ৫৩ বছর বয়সী নাশিদ। শক্তিশালী বোমা লাগানো একটি মোটরবাইক বিস্ফোরিত হলে কেঁপে ওঠে পুরো শহর।
নাশিদের তিন দেহরক্ষী ও এক ব্রিটিশ নাগরিকসহ দুই পথচারীও এ হামলায় আহত হন।
হামলার দায় স্বীকার করেনি কোনো গোষ্ঠী। একে সন্ত্রাসী হামলা আখ্যা দিয়েছে পুলিশ।
ওই হামলার দুই দিনেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে ঘটনাস্থলের কাছে সন্দেহজনক আচরণের জন্য চিহ্নিত চার ব্যক্তির খোঁজ চলছে।
নাশিদকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তার ঘনিষ্ঠ মিত্র ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ। হামলার পরই সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকও ডেকেছিলেন তিনি।
তদন্তে সহযোগিতার জন্য শনিবার মালেতে পৌঁছাবেন অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা।
এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক উইলসন সেন্টারের এশিয়াবিষয়ক উপপরিচালক ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট মিখাইল কুগেলম্যান বলেন, ‘লক্ষ্য কে ছিলেন, সে প্রশ্নে গুরুত্ব দিলে এ হামলা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ সাবেক প্রেসিডেন্ট হলেও মালদ্বীপের রাজনীতিতে এখনও অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব নাশিদ।
‘পুরো অঞ্চলে গণতন্ত্রপন্থি নেতা হিসেবেও উল্লেখযোগ্য তিনি। বরাবরই কট্টর জাতীয়তাবাদীরা ক্ষুব্ধ তার ওপর।’
মালদ্বীপের পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার ইভা আবদুল্লা বলেন, ‘শুধু মালদ্বীপ নয়, পুরো অঞ্চলের জন্যই এ হামলা সতর্কবার্তা। তাই দ্রুত ও স্বচ্ছ অনুসন্ধান নিশ্চিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সহযোগিতাও নিচ্ছি আমরা। কোনোভাবেই সহিংস উগ্রবাদ ছড়াতে দেবো না।’
মালদ্বীপে মামুন আব্দুল গাইয়ুমের ৩০ বছরের শাসনের অবসান ঘটলে ২০০৮ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা নেন মোহাম্মদ নাশিদ। ২০১২ সালে এক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি।
পরের বছর বিতর্কিত নির্বাচনে নাশিদকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হন গাইয়ুমের সৎ ভাই আবদুল্লা ইয়ামিন। সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে ২০১৫ সালে তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ওই মামলার রায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচিত হয়।
২০১৬ সালে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় নাশিদকে। সে বছরই যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় পান তিনি।
২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার সহযোগী সোলিহ জয়ী হলে দেশে ফিরে আসেন নাশিদ।
২০১৯ সালে পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে স্পিকার হন নাশিদ। মালদ্বীপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রভাবশালী পদ এটি।
সুন্নি মুসলমান-অধ্যুষিত মালদ্বীপে অন্য ধর্মের চর্চা বা প্রচার আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। বিষয়টিকে ‘ধর্মীয় উগ্রবাদ’ বিবেচনায় দীর্ঘদিন ধরে এর কট্টর সমালোচনা করে আসছেন নাশিদ।