পশ্চিমবঙ্গের ভোটের পরের সহিংসতায় ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সক্রিয়তা চোখে পড়ার মতো। রাজ্যের সহিংসতার ঘটনায় সোমবার প্রতিবেদন চেয়ে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বুধবার আবার চিঠি লিখে এ বিষয়ে দ্রুত প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। নাহলে বিষয়টি নিয়ে বিশেষভাবে ভাবার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চার সদস্যের এক প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবার নবান্নে গিয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব, মুখ্য সচিব এবং ডিজির সঙ্গে সহিংসতার ঘটনা নিয়ে পর্যালোচনা করেন।
এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘আপনারা জানেন, কমিশনের অধীনে আইনশৃঙ্খলা থাকার সময় সহিংসতার ঘটনায় ১৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তৃণমূলের অর্ধেক। বিজেপির অর্ধেক। আরও একজন সংযুক্ত মোর্চার মারা গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘করোনা বাড়ার কারণে বাংলার সমস্ত মিটিং মিছিল সভা বন্ধ আছে। তবুও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা প্রয়োজন ছাড়াই গ্রামে গ্রামে গিয়ে দাঙ্গার উসকানি দিচ্ছেন । পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি চাই না কোনো রাজনৈতিক হিংসা হোক। আমি এদের অনুরোধ করব, পরিস্থিতি জটিল করবেন না।’
বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলিধরন তৃণমূল কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন বলেও অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। ইট ছুড়ে তার গাড়ি ভাঙচুর এবং বাঁশ দিয়ে তার ওপর হামলা করা হয় বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ।
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অজিত মাইতি বিজেপির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস হামলার ঘটনায় জড়িত নয়। বিজেপির উসকানিতে হামলা হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন অজিত।
নবান্নে মমতা বলেন, ‘বিজেপি হার মেনে নিতে পারছে না। আমি বিজেপিকে বলব হার মেনে নিতে। মানুষের রায় মেনে নিতে।’
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘টিকা পাঠাচ্ছে না। অক্সিজেন পাঠাচ্ছে না। টিম পাঠিয়ে দিচ্ছে। কই উত্তর প্রদেশের দাঙ্গার সময়, দিল্লির দাঙ্গার সময়, সাংবাদিক খুন হলে টিম পাঠায় না তো?
‘বাংলার বাইরে থেকে যেই আসবেন, সে অফিসার হোক, নেতা-মন্ত্রী যেই হোক, তাকে করোনা প্রতিবেদন নেগেটিভ দেখাতে হবে। বিশেষ বিমানে এলেও তাকে করোনা নেগেটিভ প্রতিবেদন দেখাতে হবে। কোভিড পজিটিভ ধরা পড়লে, কোয়ারেন্টিনে যেতে হবে।’
এদিকে রাজ্যে ভয়াবহ করোনা সংকটের মধ্যে পার্ক সার্কাস ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভয়াবহ অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। সেখানে নতুন করে আর কোনো রোগী ভর্তি নেয়া হবে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তারা জানিয়েছে, অক্সিজেন সংকটের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে ১৫০ জন রোগী ভর্তি আছেন। প্রত্যেকেরই অবস্থা সংকটজনক। অক্সিজেনের প্রয়োজন। কারও কারও ক্ষেত্রে ৬০-এর নিচে অক্সিজেন নেমে গেছে। অন্য হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন এনে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব জানিয়েছেন, ‘ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে একটি অক্সিজেন প্লান্ট বসানো হবে, অক্সিজেন সরবরাহ বজায় রাখতে।’
এর আগে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্টের পাইপে বরফ জমে গিয়ে বিপত্তি তৈরি হয়েছিল।
করোনা সংকট মোকাবিলায় রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় মাইকিং চলছে। মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব পালনে ধরপাকড় করছে পুলিশ প্রশাসন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বৃহস্পতিবার নবান্নে মানুষের অসুবিধার কথা জানিয়ে বলেন, ‘রাজ্যে আংশিক লকডাউনের কারণে দোকান, বাজার পুরোপুরি খোলা না থাকায় মানুষের অসুবিধা হবে। পরিবহন পুরো না চলার কারণে মানুষের অসুবিধা হবে। তারপরেও আগামী ১৫ দিন আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ।
‘এই সময়টায় করোনা সংক্রমণ বেশি হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আমি কাউকে ভয় দেখাচ্ছি না কিন্তু আপনারা সবাই সতর্ক থাকবেন। সাবধান থাকবেন। এই কঠিন পরিস্থিতিতে সাময়িক অসুবিধা আমাদের মেনে নিতে হবে।’
অন্যদিকে তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহর ওপর বৃহস্পতিবার হামলায় তার হাত ভেঙে গেছে, গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, নিরাপত্তারক্ষীর মাথা ফেটেছে। এই হামলার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার বিজেপির।