২০০৯ সাল। পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহ এলাকায় যমজ সন্তান নিয়ে বসবাস করছিলেন ফিলিস্তিনের এক দম্পতি। ১১ বছর বয়সী সন্তান দুটির চোখের সামনে হঠাৎ একদিন তাদের বাড়ির অর্ধেক দখল করে নেয় ইসরায়েলের বসতি স্থাপনকারীরা (সেটলার)।
এরপর থেকে সেটলারদের সঙ্গে একই আঙিনায় বেড়ে ওঠেন মোনা আল-কুর্দ ও তার ভাই মোহাম্মদ।
ধর্ম ও সংস্কৃতির অমিলের কারণে সেটলারদের একত্রে বসবাস করা কঠিন। তবে তার চেয়েও কঠিন দখলদারদের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া। ঝগড়া-কলহে জড়ানো তাই নিত্যদিনের ব্যাপার।
মূল বাসিন্দাদের আদালত ঘর ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়।
বাড়িসংলগ্ন বাগানে গত শনিবার জ্যাকব নামে এক সেটলারের সঙ্গে তর্কে জড়ান ২২ বছর বয়সী মোনা। ওই কথোপকথনের ভিডিও ধারণ করেন তামের মাকাদলা নামে ফিলিস্তিনি এক অধিকারকর্মী।
ভিডিওতে দেখা যায়, মোনা ওই সেটলারের উদ্দেশে বলছেন, ‘জ্যাকব, আপনি জানেন, এটা আপনার বাড়ি নয়?’
জবাবে জ্যাকব বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা আমার বাড়ি নয়। কিন্তু আমি চলে গেলে কি আপনি এটি ফিরে পাবেন? তাহলে সমস্যা কোথায়? কেন চিৎকার করছেন?’
সে সময় মোনা তাকে বাড়ি দখলকারী বললে জ্যাকব বলেন, ‘আমি যদি আপনার বাড়ি দখল না করি, তাহলে অন্য কেউ করবে। আমার সঙ্গে চিৎকার-চেচামেচি করে লাভ নেই।’
একপর্যায়ে মোনা সজোরে বলেন, ‘আমার বাড়ি দখল করার অধিকার কারোর নেই!’
মোনার ভাই মোহাম্মদ এর আগে আল জাজিরাকে বলেছিলেন, আমেরিকান ভঙ্গিতে ইংরেজিতে কথা বলা সেটলারদের সঙ্গে থাকা অসহনীয় ও ভয়াবহ।
তিনি বলেন, ‘তারা (সেটলার) আমাদের ঘরে বসে থাকে, যন্ত্রণা দেয়, হয়রানি করে। আমাদের বাড়ির বাকি অর্ধেক অংশও তাদের ছেড়ে দিতে যা যা করার দরকার সবই তারা করে।
‘শুধু তাই নয়, আমাদের প্রতিবেশীদেরও হয়রানি করা হয় যাতে তারাও ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনিদের চিহ্ন পুরোপুরি মুছে ফেলার অংশ হিসেবে এসব করছে তারা।’
মার্চে সেটলারদের বসতি স্থাপনে সুবিধার জন্য শেখ জারাহ এলাকার ছয় ফিলিস্তিনি পরিবারকে ঘর খালি করার নির্দেশ দেয় ইসরায়েল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের ডিস্ট্রিক্ট আদালত। এর মধ্যে মোনার পরিবারও আছে।
একই আদালত ১ আগস্টের মধ্যে আরও সাত ফিলিস্তিনি পরিবারকে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
গত কয়েক মাসে শেখ জারাহ এলাকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের বাড়ি-ঘর থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইসরায়েল। এর প্রতিবাদে এলাকাবাসী বেশ কয়েকবার অবস্থান ধর্মঘট করে।
তাদের বক্তব্য, ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করা শুরু হয়। জাতিগত নিধনযজ্ঞ সেই থেকে চলছে।
শেখ জারাহ এলাকায় সোমবার রাতে ফিলিস্তিনিদের উৎখাতে হামলা চালায় ইসরায়েলের বাহিনী। ওই সময় তারা ফিলিস্তিনিদের মারধরের পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড বোমা ছোড়ে।
ফিলিস্তিনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। এক কিশোরীসহ পাঁচ ফিলিস্তিনি পুরুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন তাদের মধ্যে দুইজনকে ছেড়ে দেয়া হয়।