ফোর্বসের শীর্ষ ধনীর তালিকায় বিল গেটস এখন চতুর্থ। তবে মেলিন্ডার সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদের পর সম্পদের ভাগবাঁটোয়ারা হয়ে গেলে তার নাম তালিকার ১৭-তে নেমে যেতে পারে।
বিল-মেলিন্ডার যৌথ সম্পদের তালিকা যেমন দীর্ঘ, তেমনি বিস্ময়কর।
যে বাড়িতে দীর্ঘ ২৭ বছর এই দম্পতি পার করেছেন, তার নাম জানোডু ২.০। দাম ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ফোর্বস সাময়িকীর হিসাবে এ দম্পতির মোট সম্পদের পরিমাণ ১৩ হাজার কোটি ডলার।
এর মধ্যে জানোডু ছাড়াও রয়েছে দ্য ভিঞ্চির শিল্পকর্ম, কয়েকটি প্রাইভেট জেট বিমান, বিলাসবহুল বাড়ি এবং ব্র্যান্ডেড কারের বিশাল বহর।
বিল গেটসের কৃষিজমির পরিমাণও কিন্তু কম নয়, যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ পরিমাণ বেসরকারি কৃষিজমির মালিক তিনি।
এই বিপুল সম্পত্তি থেকে এ দম্পতির তিন সন্তান-জেনিফার, রোরি ও ফিবি পাবেন মাত্র ১ কোটি ডলার করে। বিল ও মেলিন্ডা গেটসের বাকি সম্পত্তি চলে যাবে গেটস ফাউন্ডেশনের কাছে, ব্যবহার হবে জনকল্যাণে।
প্রাসাদসম বাড়ি
এ দম্পতির বিলাসবহুল বাড়ি আছে ওয়াশিংটন, ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়াইয়োমিংয়ে। তবে তাদের প্রধান বাড়িটি জানোডু ২.০। ওয়াশিংটনের সিয়াটলে এর অবস্থান। ৬৬ হাজার বর্গফুটের এ ম্যানশনের পাশেই লেক ওয়াশিংটন।
১৯৮৮ সালে বিল যখন এ বাড়িটি কেনেন তখন দাম ছিল ২০ লাখ ডলার। এর পর সাত বছর ধরে ৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার খরচ করে বাড়িটিকে নিজের স্বপ্নের প্রাসাদে পরিণত করেছেন বিল।
গত মাসে শেষবারের মতো একসঙ্গে জুম মিটিংয়ে অংশ নেন বিল-মেলিন্ডা
ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, সে সময় লেকের পাড়ে এ ধরনের নির্মাণযজ্ঞ নিয়ে বিলের প্রতিবেশীদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। তবে বিনা মূল্যে গাড়ি ধোয়ার ব্যবস্থা এবং প্রতিবেশীদের টুকটাক কাজে নিজের নির্মাণকর্মীদের যুক্ত করার মাধ্যমে তাদের মন জিতে নেন বিল।
জানোডু ২.০-এর এখনকার বাজারদর ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ বাড়িতে যেমন অবারিত প্রকৃতি আছে, তেমনি আছে প্রযুক্তি। বাড়িতে ইনডোর-আউটডোর পুল আছে। পুলে আন্ডার ওয়াটার মিউজিক সিস্টেম রয়েছে। আর ফ্লোরগুলোতে রয়েছে ফসিল ডিজাইন।
পাঁচ একরের এই প্লটে একটি কৃত্রিম সমুদ্র রয়েছে। এতে স্যামনসহ বহু ধরনের মাছ সাঁতার কাটে। সৈকতের বালু আনা হয়েছে ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে।
ডেইলি মেইল অনলাইন জানায়, ম্যানশনটি সাত বেডরুমের। বাথরুম আছে ১৮টি। শৈল্পিকভাবে সাজানো হোম থিয়েটারে আসন ২০টি। খাবার ঘরের আকার ১ হাজার বর্গফুট, আসন ২৪টি।
বড় সমাবেশের জন্যও বাড়িতে আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুটের ওই হলে একসঙ্গে ২০০ মানুষ পার্টি করতে পারেন।
বাড়ির লাইব্রেরির আয়তন ২ হাজার ১০০ বর্গফুট। বিল অবশ্য নিজের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ বলে মনে করেন লেওনার্দো দ্য ভিঞ্চির একটি বৈজ্ঞানিক নোটবইকে। বিয়ের বছর অর্থাৎ ১৯৯৪ সালে নিলাম থেকে ৩ কোটি ডলার দিয়ে কোডেক্স নামে এই নোটবইটি কেনেন তিনি। এটি রাখার জন্য লাইব্রেরির আলাদা একটি কর্নার সাজানো হয়েছে।
বিল-মেলিন্ডার বাড়ির লাইব্রেরি
বাসিন্দাদের পছন্দ অনুসারে বাড়ির তাপমাত্রা, সংগীত ও আলোর পরিবর্তন হয়। প্রতিটি রুমের জন্যই আছে স্বতন্ত্র এ ব্যবস্থা।
এ ছাড়া বিল ও মেলিন্ডা গেটসের বাকি বাড়িগুলোর মধ্যে ওয়াইয়োমিংয়ের ৪৯২ একর এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় ২২৮ একরের ওপর র্যাঞ্চ রয়েছে।
অফুরন্ত কৃষিজমি
বিল গেটস ঠিক কী কারণে কৃষিজমিতে বিপুল বিনিয়োগ করেছেন তা এক রহস্য। ১৮টি রাজ্যে ২ লাখ ৪২ হাজার একর কৃষিজমি রয়েছে তার। যুক্তরাষ্ট্রে বেসরকারি মালিকানার ভিত্তিতে বিল গেটসের কাছেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি কৃষিজমি। অবশ্য সব ধরনের জমির হিসাব বিবেচনায় নিলে তিনি এখনও দেশটির শীর্ষ ১০০ ভূমি মালিকের তালিকায় নেই।
বিলাসবহুল গাড়িবহর
গাড়ির প্রতি বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে বিলের। তার সিয়াটলের বাড়িতে ৩০টি গাড়ি রাখার গ্যারাজ রয়েছে। শুধু গাড়ির শখ নয়, গতি পরীক্ষাতেও বিশেষ আগ্রহী তিনি। একবার গতির পরীক্ষা করতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটান। পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে গারদে পোরে। পরে অবশ্য জামিনে ছাড়া পান।
পোরশে ৯৩০ টার্বো
গেটসদের সংগ্রহে আছে একটি পোরশে ৯৩০ টার্বো, একটি জাগুয়ার এক্সজে৬ এবং একটি ফেরারি ৩৪৮। বিলের সংগ্রহে থাকা সবচেয়ে মূল্যবান গাড়ি হচ্ছে পোরশে ৯৫৯। এই মডেলের গাড়ি পুরো বিশ্বে আছে মাত্র কয়েক শ। গাড়িটির জন্য তিনি ১৩ বছর অপেক্ষা করে ছিলেন। সেটি কাস্টমসেও পড়ে ছিল দীর্ঘদিন। যুক্তরাষ্ট্রে এর ব্যবহারের জন্য আইনে বিশেষ পরিবর্তন আনতে হয়।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিল তার শেষ গাড়িটি কেনেন। পোরশে টাইক্যান—ইলেকট্রিক গাড়িটি বিলের সংগ্রহে প্রথম ইলেকট্রিক গাড়ি।
প্রাইভেট জেট
সময় বাঁচায় বলে এ বাহনের প্রতিও বিলের আগ্রহ তুমুল। গেটসদের দুটি সাড়ে ৬ কোটি ডলারের গালফস্ট্রিম জি৬৫০ইআর, দুটি বোম্বার্ডিয়ার চ্যালেঞ্জার ৩৫০, একটি সেসনা সি প্লেন এবং বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার রয়েছে।
গালফস্ট্রিম জি৬৫০ইআর
বিস্ময়কর শিল্পকর্ম সংগ্রহ
শিল্পকর্মের প্রতি আগ্রহের জন্য বিশেষ খ্যাতি রয়েছে বিল ও মেলিন্ডা গেটসের। তাদের সংগ্রহে থাকা কোডেক্সের কথা আগেই বলা হয়েছে। এ ছাড়া উইনস্লো হোমারের তেলচিত্র ‘লস্ট অন দ্য গ্র্যান্ড ব্যাংকস’ তিনি কেনেন ১৯৯৮ সালে ৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার দিয়ে।
কোডেক্স
পরের বছর ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার দিয়ে কেনেন জর্জ বিলোসের পোলো ক্রাউড। ২ কোটি ডলার দিয়ে কিনেছেন চাইল্ড হাসামের দ্য রুম অব ফ্লাওয়ারসহ আরও বহু চিত্রকর্ম।