বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পশ্চিমবঙ্গ কার?

  •    
  • ১ মে, ২০২১ ২২:২০

বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক কর্মজীবনের সবচেয়ে কঠিন নির্বাচনের সামনে দাঁড়িয়ে মমতা। কালই নির্ধারিত হবে টানা ১০ বছর ধরে রাজ্য শাসন করা এই নেতার ভবিষ্যৎ। তার বিরুদ্ধে জয়ের জন্য দীর্ঘ প্রচার চালিয়েছেন খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ বিজেপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা।

পশ্চিমবঙ্গ, অসম, কেরালা, তামিলনাড়ু ও পুদুচেরিসহ ভারতের পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হবে রোববার।বাংলাভাষী রাজ্যটিতে মমতা বনাম মোদি লড়াইয়ে জয় কার, তা নিয়েই উত্তেজনা সবচেয়ে বেশি।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে কি টানা তৃতীয়বার সরকার গঠনের সুযোগ পাবে রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস? নাকি তৃণমূলের দূর্গ ভাঙতে সফল হবে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি? শেষ মুহূর্তে এসব প্রশ্নে তোলপাড় সারা ভারতের রাজনীতি।

সব জবাব মিলবে রোববার।

করোনাভাইরাস মহামারিকালীন স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে ভোট গণনার প্রস্তুতি নিয়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। প্রতিটি কেন্দ্রে ১৫ ধাপে সম্পন্ন হচ্ছে স্যানিটাইজেশন। এ ছাড়া সামাজিক দূরত্ব রক্ষা, জনসমাগম নিষিদ্ধ করাসহ অন্যান্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ-আসামসহ পাঁচ রাজ্যে দুই হাজার ৩৬৪টি হলরুমে চলবে গণনা। ২০১৬ সালের তুলনায় এ সংখ্যা ২০০ শতাংশেরও বেশি। সে বছর ৮২২টি আসনের এক হাজার দুটি হলরুমে ভোট গণনা হয়েছিল।

মূলত আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নের কারণে এবার আরও বিস্তৃত পরিসরে গণনা চলবে।

করোনার ব্যাপক সংক্রমণ ও প্রাণহানি, অক্সিজেনের জন্য হাহাকার, হাসপাতালে বেডের সংকটসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম ও টিকার তীব্র ঘাটতি ইত্যাদির নিচে অনেকটাই চাপা পড়েছে ভোটের শোরগোল।

এর মধ্যে আট ধাপে ৩৪ দিনের ভোটযুদ্ধ আর এর চেয়েও দীর্ঘ নির্বাচনি প্রচার শেষে পাঁচ রাজ্যেই করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু ঊর্ধ্বমুখী।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েকদিনে করোনা শনাক্তের হার ৭৮ শতাংশের ওপরে থাকা ১১ রাজ্যের মধ্যে আছে কেরালা, তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গ।

ভারতে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে এক কোটি পৌনে ৯২ লাখ মানুষের দেহে। মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ১২ হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে কেবল গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে চার লাখের বেশি মানুষের দেহে। এ সময়ে প্রাণ গেছে তিন হাজার ৫২২ জনের।

যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছে ভারতে। প্রাণহানির তালিকাতে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও মেক্সিকোর পরের অবস্থান ভারতে।

স্বাভাবিকভাবেই এ পরিস্থিতিতে চাপে রয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে মার্চ মাসেই মহামারি পরিস্থিতি জটিল হতে যাচ্ছে বলে স্বাস্থ্যবিদদের সতর্কতায় সরকার কান দেয়নি বলে আরও বেড়েছে সে চাপ।

এ অবস্থায় অবস্থান দুর্বল- এমন রাজ্যগুলোতেও কি বিজেপি ঘাঁটি গাড়তে পারবে নাকি হারানো আসন ফিরে পাবে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস, নানা গুঞ্জন চলছে তা নিয়েও।

আগামীকাল সকাল থেকে ভোট গণনা শুরু হয়ে তা চলবে মধ্যরাত পর্যন্ত। প্রায় এক হাজার ১০০ পর্যবেক্ষক, প্রার্থী ও তাদের এজেন্টরা গণনা প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবেন। প্রত্যেকের সঙ্গে করোনা টেস্টের নেগেটিভ প্রতিবেদন অথবা টিকা গ্রহণের প্রমাণ থাকা বাধ্যতামূলক।

মমতারই থাকছে পশ্চিমবঙ্গ?

বুথফেরত জরিপের আভাস, পশ্চিমবঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও শেষ পর্যন্ত বিজেপিকে হারিয়ে জয় পেতে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসই।

সংঘাত-সহিংসতা ও মমতা-মোদি বাগযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ২৭ মার্চ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত আট ধাপে ভোট হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে।

রাজ্যের ১০৮টি গণনা কেন্দ্রে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

২৩ জেলার সবগুলোতে কমপক্ষে ২৯২ জন পর্যবেক্ষক উপস্থিত থাকবেন, মোতায়েন থাকবে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ২৫৬টি ইউনিট।

বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক কর্মজীবনের সবচেয়ে কঠিন নির্বাচনের সামনে দাঁড়িয়ে মমতা। কালই নির্ধারিত হবে টানা ১০ বছর ধরে রাজ্য শাসন করা এই নেতার ভবিষ্যৎ।

তার বিরুদ্ধে জয়ের জন্য দীর্ঘ প্রচার চালিয়েছেন খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ বিজেপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা।

২৯৪ আসনের বিধানসভায় যে দল বা জোট ‘ম্যাজিক ফিগার’ ১৪৮টি আসন পাবে, সরকার গঠন করবে তারাই।

২০১৬ সালের নির্বাচনে মোদির বিজেপি জিতেছিল মাত্র তিন আসন। এরপর থেকেই মোদি সরকারের কট্টর সমালোচক মমতার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে আরও শক্ত ঘাঁটি তৈরির লক্ষ্যে তৎপরতা শুরু করে বিজেপি।

এ অবস্থায় ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টি পায় বিজেপি।

কী বলছে বুথফেরত জরিপ?

পশ্চিমবঙ্গে কমপক্ষে চারটি জরিপে মমতার নিরঙ্কুশ বিজয়ের আভাস দেয়া হয়েছে।

এপিবি-আনন্দ বুথফেরত জরিপ বলছে, ৪২ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতা ধরে রাখবে তৃণমূল কংগ্রেস। দলটি আসন পেতে পারে ১৫২ থেকে ১৫৪টি। বিজেপির ঘরে যেতে পারে ১০৯ থেকে ১২১টি আসন। আর বাম-কংগ্রেস জোট পেতে পারে ১৪ থেকে ২৫টি আসন।

এই জরিপ ঠিক থাকলে এককভাবেই তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে পারবে তৃণমূল।

একই আভাস এনডিটিভির বুথফেরত জরিপেও। তাদের হিসাবে মমতার ঘাসফুল মার্কা ২৯৪টি আসনের মধ্যে পেতে পারে ১৫৬টি আসন। আর পদ্মফুল মার্কা বিজেপি পেতে পারে ১২১টি আসন। ১৭টি আসন যেতে পারে অন্যদের ঘরে।

মমতার অনায়াস জয়ের কথা বলছে টাইমস নাউয়ের জরিপও। এতে দেখা যাচ্ছে, মমতা পাচ্ছেন ১৫৮টি আসন, আর মোদির বিজেপি পেতে পারেন ১১৫টি আসন। অন্যদের ঘরে যেতে পারে ২১টি আসন।

মমতার জয়জয়কারের কথা বলছে ‘গ্রাউন্ড জিরো রিসার্চ’। তাদের হিসাবে তৃণমূল পেতে পারে ১৫৪ থেকে ১৮৬টি। বিজেপি পেতে পারে ৯৬ থেকে ১২৪টি আসন। বামসহ অন্যরা পেতে পারে ছয়টি থেকে ১৪টি আসন।

অন্যদিকে মমতার জয়ের কথা সরাসরি না বললেও ‘অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া’র জরিপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দেয়া হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি পেতে পারে ১৩৪ থেকে ১৬০টি আসন। তৃণমূল পেতে পারে ১৩০ থেকে ১৫৬টি আসন। অন্যান্য দলের ঘরে যেতে পারে তিনটি আসন।

রাজ্যটিতে তৃতীয় বৃহৎ প্রতিদ্বন্দ্বী বাম-কংগ্রেস জোট।

পশ্চিমবঙ্গে বামদের আধিপত্য গুঁড়িয়ে ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১৬ সালের নির্বাচনেও নিরঙ্কুশ জয় পায় দলটি। সেবার ২৯৪ আসনের মধ্যে তৃণমূল পায় ২১১টি আসন। কংগ্রেস জিতে ৪৪টি আসন; বাম ফ্রন্ট ৩২টি আসন।

অসমের রাজনৈতিক পরিস্থিতি

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী আরেক রাজ্য অসমে ২৭ মার্চ, ১ এপ্রিল ও ৬ এপ্রিল তিন ধাপে ভোট হয়। রাজ্যটিতে ক্ষমতায় আবারও গেরুয়া শিবিরই সম্ভাবনাময় বলে জানা যাচ্ছে বুথফেরত জরিপ থেকে।

রাজ্যটিতে ক্ষমতাসীন বিজেপি জোট গড়েছে অসম গণ পরিষদ, ইউনাইটেড পিপলস পার্টি লিবারেল ও গণ সুরক্ষা পার্টির সঙ্গে।

বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস, এআইইউডিএফ, বোরোল্যান্ড পিপলস ফ্রন্ট, সিপিআই(এম), সিপিআই, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, রাষ্ট্রীয় জনতা দল ও আঞ্চলিক গণ মোর্চার সমন্বয়ে গঠিত ‘মহাজোট’।

দীর্ঘদিন ধরে অসমে কংগ্রেসের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকলেও ২০১৬ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে কংগ্রেসকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে বিজেপি।

অন্যান্য রাজ্যের পরিস্থিতি

তামিলনাড়ু, কেরালা ও পুদুচেরিতে একযোগে এক ধাপেই বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয় গত ৬ এপ্রিল।

বলা হচ্ছে, কেরালায় চার দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা বাম জোটই আবার আসছে ক্ষমতায়।

আসাম-কেরালা-পুদুচেরিতে এআইএনআরসি-বিজেপি-এআইএডিএমকে জোটের বিপরীতে কংগ্রেসের অবস্থান বেশ দুর্বল হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

একমাত্র তামিলনাড়ুতে সুখবর পেতে পারে ভারতের প্রধান বিরোধী দলটি। রাজ্যটিতে এআইএডিএমকে-বিজেপি জোটকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারে ডিএমকে নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলীয় জোট।

পাঁচটি রাজ্যেই করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে বিজেপির ব্যর্থতার প্রভাব ভোটারদের মনে কমবেশি পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর