করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় আংশিক লকডাউন ঘোষণা করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
উদ্ভূত করোনা সংকট মোকাবিলায় রাজ্য সরকার শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সুইমিংপুল, জিম, থিয়েটার হল, রেস্তোঁরা, বিউটি পার্লার, স্পা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সব ধরনের জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজ্য সরকার।
পুলিশ প্রশাসনকে কড়াভাবে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলেছে রাজ্য সরকার। কেবলমাত্র জরুরি পরিষেবা, মুদি দোকান ও ফার্মেসিকে ছাড় দেয়া হয়েছে। সকাল ৭টা থেকে ১০টা এবং বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বাজার খোলা থাকবে।
যেভাবে করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই কড়া পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা পুরোপুরি ব্যাহত না করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার । ধাপে ধাপে নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়ানো হবে বলে রাজ্য সরকারের সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজ্যে আংশিক লকডাউনের কথা জানিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে।
এদিকে করোনার জেরে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা না দিয়ে তারা দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে। আর দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্কুলে পরীক্ষা দেবে বলে নির্দেশিকা জারি করেছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ।
পশ্চিমবঙ্গে বৃহস্পতিবার নতুন করে ১৭ হাজার ২০৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু কলকাতাতেই আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ৮২১ জন। এ সময় ৭৭ জনের মৃত্যু হয়। রাজ্যে এ সংখ্যাই সর্বোচ্চ। পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়েছে, সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের বেশি।
বিধানসভার নির্বাচনের ফল ও আত্মবিশ্বাসী মমতা
করোনা সংকটের মধ্যেও ভোট পরবর্তী ও ২ মে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
ইলামবাজারে বোমা বিস্ফোরণে শেখ হাফিজুল নামে এক ব্যক্তির হাত উড়ে যায়। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয় । বোমা বাঁধতে গিয়ে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। তৃণমূল অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পঞ্চায়েতের দুর্নীতি লুকাতে নন্দীগ্রামের পঞ্চায়েত অফিসের তালা ভেঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথি চুরির অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূল বিজেপির অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এদিকে শুক্রবার তৃণমূলের সব প্রার্থীদের নিয়ে এক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন তৃণমূল নেতা মমতা বন্দোপাধ্যায়। আত্মবিশ্বাসী মমতা সভায় বলেন, ‘দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গঠন করছে।’
এদিকে, বেশিরভাগ এক্সিট পোল (বুথ ফেরত জরিপ) সমীক্ষায় তৃণমূলের সরকার গঠনের পক্ষে মত এসেছে।
৪৫ মিনিটের বৈঠকে দলের ২৮৭ জন প্রার্থী ও শীর্ষ নেতৃত্বের উপস্থিতিতে তৃণমূল নেতা (সুপ্রিমো) মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘২ মে কাউন্টিং নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ১৭ নম্বর ফর্ম ভালো করে দেখে, তারপর গণনা শুরু করতে দিতে হবে। খাতা কলম সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে । অন্যের দেয়া খাবার, বিড়ি সিগারেট খাওয়া যাবে না। ভোরবেলা গণনা কেন্দ্রে ঢুকে যেতে হবে।’
মমতা আরও বলেন ‘কোন জায়গা ছেড়ে যাওয়া যাবে না। প্রলোভনে পা দেবেন না। সব সময় নজর রাখতে হবে। অনেক আসনে আমাদের জয় নিশ্চিত। বিজেপি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সাবধানে থাকবেন। পোস্টাল ব্যালটে গণনার সময় সতর্ক থাকবেন। উত্তর বাংলায় বিশেষ নজর দিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোন কোন ক্ষেত্রে শুরুতে বিজেপি এগিয়ে গেলেও গণনা কেন্দ্র ছাড়বেন না। সরকারে তৃণমূল কংগ্রেসই থাকছে।’
অন্যদিকে, বিজেপি দাবি করেছে এক্সিট পোল যাই বলুক, দুই শর বেশি আসনে জিতে বিজেপিই পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করবে।