মানব ও অর্থ পাচারের দায়ে কুয়েতে লক্ষ্মীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের সাজা বেড়েছে আপিলে। বিচারিক আদালত তাকে চার বছরের কারাদণ্ড দিলেও আপিল বিভাগ সাজা বাড়িয়ে সাত বছর করেছে।
কুয়েতের আরবি দৈনিক আল কাবাস এক প্রতিবেদনে জানায়, আপিল বিভাগ কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২০ লাখ দিনার জরিমানা করেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি ৫৬ কোটি টাকারও বেশি।
পাপুলের পাশাপাশি তার সহযোগী সালাহ আবদুলরেদা খুরশিদ ছাড়াও দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জারাহ এবং কুয়েতি দুই কর্মকর্তার সাজাও বাড়িয়ে সাত বছর করেছে আপিল আদালত।
মামলার আরেক আসামি কুয়েতের সংসদ সদস্য সাদুন হাম্মাদ আল-ওতাইবিকে খালাস দিয়ে বিচারিক আদালতের আদেশও আপিলে বহাল রাখা হয়েছে।
গত ২৮ জানুয়ারি তাকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় কুয়েতের একটি আদালত। পাশাপাশি বাংলাদেশি টাকায় ৫৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর এই সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেন পাপুল।
ওই সাজা হওয়ার পর পাপুলের সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণার পর সেখানে উপনির্বাচনের তারিখও জানায় নির্বাচন কমিশন। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেছে।
সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েতে যাওয়ার কয়েক দশকের মধ্যে ধনকুবের হয়ে যাওয়া পাপুল একাদশ সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য হন।
সে সময় তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল।তবে ভোটের আগে আগে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান সরে দাঁড়ান। আর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পাপুলের পক্ষে কাজ করেন।
পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলামও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংসদের আসন বণ্টনের হিসাবে নারী আসনের একটি পেয়েছিলেন এবং তারা সেলিনাকে মনোনয়ন দেন।
পাপুলের স্ত্রীও আসামি
পাপুলের পাশাপাশি তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানও অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থপাচার মামলার আসামি।
সংসদ সদস্য কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম
দুর্নীতি দমন কমিশন গত ১১ নভেম্বর মামলাটি করে। এই মামলায় সেলিনা এবং ওয়াফা গত ২৭ ডিসেম্বর জামিন পান। পরে গত ১১ ফেব্রুয়ারি তাদেরকে স্থায়ী জামিন দেয়া হয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, জেসমিন প্রধান ২ কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
‘কাগুজে প্রতিষ্ঠান’ করে তিনি ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪৮ কোটি টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন বলেও বলা হয় মামলায়।
বলা হয়, এসব কাজে পাপুল, তার স্ত্রী ও মেয়ে সহযোগিতা করেছেন।
পাপুল কুয়েতে গ্রেপ্তারের পর গত বছরের ২২ জুলাই সেলিনা ইসলাম ও জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
সেলিনা ইসলাম এবং মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানের আট ব্যাংকের ৬১৩টি হিসাব জব্দ করেছে দুদক।
তাদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা ৩০ দশমিক ২৭ একর জমি ও গুলশানের ফ্ল্যাট বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে দুদক। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়েও চিঠি দিয়েছে কমিশন।