কঠিন পরিস্থিতি অতিক্রম করছে ভারত। দেশটির বেশ কয়েকটি রাজ্য করোনা সংক্রমণের হারে উচ্চ ঝুঁকিতে। এর মধ্যেই চলেছে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন।
করোনা শনাক্ত বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। সংক্রমণের হার বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যেতেই পশ্চিমবঙ্গে টিকার জন্য হাহাকার পড়েছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অক্সিজেন, ওষুধ, শয্যা সংকট। ভ্যাকসিন না থাকার জন্য বিভিন্ন কেন্দ্রে টিকা দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।
চাহিদার তুলনায় যোগানের অপ্রতুলতা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগর কল্যাণগড়ে করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে টিকা পেতে মাঝরাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয়রা। টিকার অভাবে লাইনে দাঁড়ানো প্রথম ৬০ জনকে টিকা দেয়া হবে, এই মর্মে স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়।
টিকা আগে পেতে মরিয়া মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ধস্তাধস্তি, মারামারি শুরু হয় লাইনে দাঁড়ানোদের মধ্যে।
এ ছাড়া রাজ্যের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে দেখা দিয়েছে তীব্র অক্সিজেন সংকট। মানিকতলা জে এন রায় হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট এতোটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে, তাদের হাতে আর মাত্র এক ঘণ্টার অক্সিজেন আছে। সেখানে ভর্তি আছেন ৮০ জন রোগী। পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেবে সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এনআরএসসহ বিভিন্ন হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিডে আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসা পরিষেবাও ব্যাহত হচ্ছে।
জঙ্গিপুরের এক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীরা করোনা আক্রান্ত হওয়ায় কেউ আসছেন না স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। স্থানীয় বাসিন্দারা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের সোয়াব নিজেরাই নিচ্ছেন।
মানা হচ্ছে না কোনোরকম নিয়ম। চরম অব্যবস্থার কথা শুনে সিএমওএইচ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
অন্যদিকে করোনা প্রতিবেদন না পাওয়ার জন্য চিকিৎসা পাচ্ছেন না অনেক রোগী। করোনা পরীক্ষার লাইনে অত্যধিক ভীড়ের চাপ থাকায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষার প্রতিবেদন পেতে কোথাও দু-তিন দিন পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। আর সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু হচ্ছে অনেকের।
রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ। এই সংকটে কোভিড বিধি মানার জন্য কড়া নির্দেশিকা জারি করতে, মুখ্যসচিব, ডিজি ও কলকাতার সিপিকে নির্দেশ দিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র।
মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে নবান্নে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে করোনা মোকাবিলায় কিছু জরুরি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে নতুন নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে, খোলাবাজারে নয়, হাসপাতালে মিলবে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রেমডেসিভির। সব রোগীর জন্য নয়, রেমডেসিভির।
নতুন নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, প্রয়োজন ছাড়া হাসপাতালে ভর্তিও নয়। শুধুমাত্র চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনই যথেষ্ট নয়। করোনা পজিটিভ প্রতিবেদন থাকলে, তবেই মিলবে অক্সিজেন।
ডেথ সার্টিফিকেট দেয়ার ক্ষেত্রেও কিছু সংশোধনী এনে জানানো হয়েছে, এখন থেকে ব্যক্তিগত ডাক্তার ও করোনা ডেথ সার্টিফিকেট দিতে পারবেন।
পরিবারের হয়রানি লাঘব করতে সরকারের তরফে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। করোনা রোগীর সৎকার কাজ প্রশাসনের তরফে বিনামূল্যে করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
রাজ্যজুড়ে মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে। ভয় ধরানোর মত করোনা সংক্রমণের পরিসংখ্যান।
স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার ৮৮৯ জন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে মারা গেছে ৫৭ জন।
এখন পর্যন্ত রাজ্যে মোট ৭ লাখ ৪৩ হাজার ৯৫০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সক্রিয় রোগী আছে ৮৮ হাজার ৮০০ জন। যার অধিকাংশই পশ্চিমবঙ্গে।