বিশ্বজুড়ে চলছে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ। বিশেষ করে ভারতে এই ঢেউ পরিস্থিতিকে খুব জটিল করে তুলেছে। দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়েছে, মৃত্যুও ছাড়িয়েছে দুই হাজারের কোটা। পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির সরকার।
এমন অবস্থায় ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে দেশটির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (আইআইটি) একদল গবেষক নতুন জীবণুমুক্তকরণ মাস্ক তৈরির খবর জানিয়েছে।
আনন্দবাজারের এক খবরে বলা হচ্ছে, গবেষক দলটি এমন এক মাস্ক তৈরি করেছেন যা শুধুমাত্র ভাইরাসকে শরীরে প্রবেশ থেকে আটকাতে সাহায্যই করে না, মাস্কের ওপর চলে আসা ভাইরাসকে মেরেও ফেলে।
এই উদ্ভাবন দেশটিতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ থেকে রক্ষায় সহায়তা করতে পারবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
আইআইটি মান্ডির গবেষক দলটি আমেরিকার প্রখ্যাত জার্নাল ‘আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি- অ্যাপ্লায়েড ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড ইন্টারফেসেস’-এ তাদের গবেষণাটি প্রকাশ করেছে।
গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন আইআইটির অমিত জায়সওয়াল। তার সঙ্গে কাজ করেছেন সৌনক রায়, প্রবীণ কুমার ও অনিতা সরকার।
মাস্কে মলিবডেনাম ডাইসালফাইডের আস্তরণ দেয়া হয়েছে চুলের থেকেও কয়েক গুণ পাতলা করে। ছবি: সংগৃহীত
মাস্কটি তৈরি করা হয়েছে মলিবডেনাম ডাইসালফাইড দিয়ে। বিশেষ এই উপাদান দিয়ে চুলের থেকেও কয়েক গুণ পাতলা একটি আস্তরণ তৈরি করা হয়েছে। পরে সেই আস্তরণ লাগিয়ে দেয়া হয়েছে মাস্কের ওপরে।
গবেষকরা বলছেন, উপাদানটির অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল গুণাগুণ রয়েছে। ১০০ থেকে ২০০ ন্যানোমিটারের কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটিরিয়া এই আস্তরণের ওপর চলে এলে তাকে মুহূর্তেই মেরে ফেলে ওই আস্তরণ।
করোনাভাইরাস ১২০ ন্যানোমিটারের। তাই এই উপাদানের সংস্পর্শে এলে সেটিও মারা যায়।
মলিবডেনাম ডাইসালফাইডের ওই আস্তরণ জীবাণুকে মেরে ফেলতে দুইভাবে কাজ করে। এর উপরিতল খুব ধারালো। ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের তলায় দেখলে মনে হবে ঠিক যেন অনেকগুলো ছুরি পর পর রাখা রয়েছে।
করোনাভাইরাস বা কোনো জীবাণু এর সংস্পর্শে এলেই তাদের কোষপর্দা ভেদ করে ভিতরে প্রবেশ করে ছুরির মতো ধারালো অংশগুলো। এতে মারা যায় ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া।
সূর্যের আলোয় অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে এই উপাদান। কিছুক্ষণ সূর্যের আলোয় থাকলে এর তাপমাত্রা হয় ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। আর এই তাপমাত্রা জীবাণুকে বাঁচতে দেয় না।
গবেষক দল বলছে, মাস্কটি একাধিকবার ব্যবহার করা যায়। এমনকি এটি রোদে দিয়েও ব্যবহার করা যাবে।
আর মলিবডেনাম ডাইসালফাইডের অন্যতম গুণ হলো, এটি সাবান-পানিতে ধুয়ে নিলেও কার্যকারিতা নষ্ট হয় না। পরীক্ষার সময় মাস্ক ৬০ বার সাবান-পানিতে ধোয়ার পরও একইভাবে জীবাণু ধ্বংস করেছে মাস্কটি।
মলিবডেনাম ডাইসালফাইড দিয়ে শুধু মাস্ক নয়, পিপিইও তৈরি করা যাবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসেও কোনো ধরনের ক্ষতি কিংবা অসুবিধা তৈরি করবে না এটি।
আইআইটির গবেষক দলের দাবি, মাস্কের সংস্পর্শে আসা ৯০ শতাংশেরও বেশি জীবাণু ধ্বংস করতে পারবে।
নতুন এই মাস্ক ও পিপিই তৈরির ফর্মুলা দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো উৎপানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেননি গবেষকরা। তারা বিষয়টি নিয়ে আরও কিছুদিন গবেষণা করার কথা জানান। এরপরই তারা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যেতে চান বলে জানান।
বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদক করলে এর দাম নাগালেই মধ্যেই থাকবে বলেও জানায় আইআইটির গবেষক দলটি।