বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ‘রাসায়নিক অস্ত্র’ কাঁদানে গ্যাসের ব্যবহার আজও

  •    
  • ২৩ এপ্রিল, ২০২১ ২২:৪৭

কাঁদানে গ্যাস চোখে শুধু জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে না, স্থায়ী অন্ধত্বের কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে। ত্বকের সংক্রমণ থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্ট সাময়িক নয়, বরং সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া ফুসফুস, কিডনি ও হৃদপিণ্ডের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। এর প্রভাব পড়ে স্মৃতিশক্তির ওপরও। এমন কি আগাম মৃত্যুর কারণও হয়ে উঠতে পারে কাঁদানে গ্যাস।

‘কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে’ দেশের গণমাধ্যমে অতি ব্যবহৃত একটি বাক্য এটি।

আন্দোলন-বিক্ষোভ দমনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাঁদানে গ্যাসের ব্যবহার অবশ্য শুধু আমাদের দেশেই নয়, পুরো বিশ্বেই বেশ পুরোনো চর্চা। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের নির্যাতনে নিহত কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যার পর শুরু হওয়া আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করতেও এই রাসায়নিকটি ব্যবহার করা হয়।

আপাতত নিরাপদ এই কাঁদানে গ্যাস আদতেই কতটা নিরাপদ তা নিয়ে আমরা কেউই কখনও তলিয়ে ভেবে দেখিনি। জানি না এর অতীত ব্যবহারও। ফ্লয়েড ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসের একদল পিএইচডি শিক্ষার্থী বিষয়টি নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বেরিয়ে আসে চমকপ্রদ কিছু তথ্য।

কাঁদানে গ্যাসের জন্ম প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রাসায়নিক অস্ত্র হিসেবে। ১৯২৫ সালের জেনেভা চুক্তি এবং রাসায়নিক অস্ত্র চুক্তি অনুসারে, এ গ্যাসের ব্যবহার নিষিদ্ধ। প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে এত বছর পরও এ গ্যাসের এমন দেদারসে ব্যবহার কী করে সম্ভব?

এর এক শব্দে জবাব, ব্যবসা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর হাতে এর একটা বড় মজুত রয়ে যায়। তৎকালীন জেনারেল আমোস ফ্রেইস সিদ্ধান্ত নেন, এই গ্যাস দেশজুড়ে পুলিশের মতো বেসামরিক বাহিনীর কাছে বেচা হবে।

তিনি অবশ্য নিষিদ্ধ জানার পরও শুধু মজুত শেষ করার মধ্যেই তার পরিকল্পনাকে সীমিত রাখেননি। বরং একে ব্যবসা হিসেবে ধরে রাখতে কাঁদানে গ্যাসের এক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। সঙ্গে যোগ হয় আইনজীবি, বিপনণকারী এবং বিজ্ঞানীদের একটি দল।

শুরু হয় প্রচারণা। কাঁদানে গ্যাসকে তুলে ধরা হয়, বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের ‘মানবিক’ বিকল্প হিসেবে। বলা হয়, এ গ্যাস প্রাণঘাতি তো নয়ই বরং এর প্রতিক্রিয়াও ক্ষণস্থায়ী। মানব শরীরে দীর্ঘস্থায়ী কোনো প্রভাব এ গ্যাস ফেলে না।

ফলাফল, গত শতাব্দির ষাটের দশক থেকে আজ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে যেকোনো বিক্ষোভ দমনে হচ্ছে এ গ্যাসের যথেচ্ছ ব্যবহার।

তবে যতটা নিরীহ বলে এর বিপণন, দেদারসে বিক্রি ও ব্যবহার চলছে ততটা নিরপরাধ নয় এ গ্যাস। শুধু মানুষের শরীরই নয়, পরিবেশের ওপরও এর তীব্র নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। কাঁদানে গ্যাস সম্পর্কে বার বারই বলা হয়ে থাকে, এতে সাময়িকভাবে চোখ লাল হয়ে যায়, জ্বালাপোড়া হয়, চোখ দিয়ে পানি ঝরে, হাঁচি-কাশি হয়। তবে কিছু সময় পরই এসব লক্ষ্মণ মিলিয়ে যায়।

সায়েন্টিফিক আমেরিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়, কাঁদানে গ্যাস নিয়ে চালানো গবেষণাগুলো বেশির ভাগই প্রাথমিক পরিস্থিতি বিবেচনায় করা। দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল নিয়ে খুব একটা কাজ হয়নি। তবে যা হয়েছে সেগুলোর ফলাফল কোনোভাবেই ইতিবাচক নয়। কাঁদানে গ্যাস চোখে শুধু জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে না, স্থায়ী অন্ধত্বের কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে। ত্বকের সংক্রমণ থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্ট সাময়িক নয়, বরং সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া ফুসফুস, কিডনি ও হৃদপিণ্ডের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। এর প্রভাব পড়ে স্মৃতিশক্তির ওপরও। এমন কি আগাম মৃত্যুর কারণও হয়ে উঠতে পারে কাঁদানে গ্যাস।

অদ্ভূত বিষয় হলো জেনেভা চুক্তিতে নিষিদ্ধ এই গ্যাসটি নিয়ে বিশ্বের কোনো সরকারেরই খুব একটা মাথাব্যথা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশ যেখানে এক বোতল সোডার ওপরও নজরদারি হয় সেখানেও কাঁদানে গ্যাসের উৎপদান পদ্ধতি নিয়ে সরকারিভাবে কোনো বিধি ব্যবস্থা নেই।

এর ব্যবহার বন্ধে নাগরিক আন্দোলন শুরু করার প্রস্তাব করেন ওই শিক্ষার্থীরা। তারা বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত ও বিশ্বজুড়ে নাগরিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে চান। মূলত জনমত তৈরির ইচ্ছা থেকেই কাঁদানে গ্যাস নিয়ে পর্যালোচনা ও গবেষণা করেন তারা। আর তার থেকেই বের হয়ে আসে বিষাক্ত এ গ্যাসের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য।

এ বিভাগের আরো খবর