ইউরোপের ৩০টি দেশ থেকে গত তিন বছরে নিখোঁজ হয়েছে অভিভাবকহীন ১৮ হাজারের বেশি অভিবাসী শিশু।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে ‘লস্ট ইন ইউরোপ’ শীর্ষক জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
জরিপটি প্রকাশ করে বেলজিয়ামের দুটি সংবাদমাধ্যম ন্যাক ও দ্যে স্তান্দার্দ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ও বহির্ভূত ৩০টি দেশে নিখোঁজ হয়েছে কমপক্ষে ১৮ হাজার ২৯২ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসী, আশ্রয়প্রার্থী ও শরণার্থী।
ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অভ্যর্থনা কেন্দ্র থেকেই নিখোঁজ হয়েছে তারা।
ধারণা করা হচ্ছে, নিখোঁজ অভিবাসী শিশুর প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বিশেষ করে ফ্রান্স ও রোমানিয়ার মতো কিছু দেশে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিষয়ে কোনো তথ্যই রাখা হয় না বলে অনেক শিশু জরিপের বাইরে থেকে গেছে।
ইনফো মাইগ্র্যান্টসের প্রতিবেদনে বলা হয়, জার্মানি থেকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৮০৬ শিশু হারিয়েছে। এ ছাড়া ইতালি থেকে ৫ হাজার ৭৭৫, বেলজিয়াম থেকে ২ হাজার ৬৪২ ও গ্রিস থেকে ২ হাজার ১১৮ শিশু নিখোঁজ হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই শিশুরা কীভাবে নিখোঁজ হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো ধারণাই নেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
বেলজিয়ামে আশ্রয়প্রার্থীদের অভ্যর্থনাবিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা ফেডাসিলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশটিতে নিখোঁজ হয়েছে অভিভাবকহীন ৫৮৩ শিশু। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭২। ২০১৮ সালে ছিল ৯৮৭।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস মহামারি ও দীর্ঘ লকডাউনের কারণে সারা বিশ্বে সব ধরনের কার্যক্রম প্রায় অচল থাকায় গত বছর নিখোঁজ শিশুর সংখ্যা অনেক কমে আসে।
ফেডাসিলের মুখপাত্র লিজ গিলিস বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে অভিবাসীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় ভীষণ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে নিখোঁজের সংখ্যাও কমেছে।’
অভিবাসীরা কোন দেশ থেকে এসেছে, তা ইউরোপের সব দেশে নথিবদ্ধ রাখা হয় না।
বিদ্যমান তথ্যে দেখা যায়, বেশির ভাগ অভিবাসীই মরক্কো, আলজেরিয়া, আফগানিস্তান, ইরিত্রিয়া ও গিনি থেকে আসা।
গত ১০ বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি সদস্য দেশের মধ্যে মাত্র ১০টি দেশ অভিবাসীদের সংখ্যা নথিভুক্ত করেছে। এক দেশের সঙ্গে অন্যগুলোর তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতিতে কোনো মিল না থাকায় তথ্যেরও ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।
নিখোঁজ হওয়া শিশুরা বিভিন্ন অপরাধী চক্রের শিকার হচ্ছে বলেও রয়েছে শঙ্কা। ২০১৯ সালের অক্টোবরে বেলজিয়াম থেকে যুক্তরাজ্যে পাচারের সময় একটি লরিতে বেশ কয়েকজন কিশোরসহ ৩৯ জন ভিয়েতনামী অভিবাসীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর আরও গভীর হয় এ উদ্বেগ।
পরামর্শক সংস্থা মিসিং চিলড্রেন ইউরোপের অভিযোগ, অভিবাসী শিশুদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে সময়মতো অবহিত করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিষয়টি উপেক্ষা করে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।