ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একাংশের আশঙ্কা রাজ্যটি মহারাষ্ট্র হয়ে ওঠা স্রেফ সময়ের ব্যাপার।
তা সত্ত্বেও করোনা মোকাবিলায় নাইট কারভিউ কোনো সমাধান নয় বলে মনে করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
তিনি বলেছেন, ‘নাইট কারভিউ কোনো সমাধান নয়। রাজ্যে এখনই লকডাউন নয়। আতঙ্কের ও কোনো কারণ নেই। সচেতন থাকতে হবে। রাজ্য সরকার মানুষের জীবন বাঁচাতে, সবরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
সোমবার মালদায় এক সাংবাদিক বৈঠকে এসব কথা বলেন মমতা।
পশ্চিমবঙ্গে করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। মাত্র ২৮ দিনে সংক্রমণ বেড়েছে প্রায় ৫৬০ শতাংশ। স্বাস্থ্য দপ্তরের বুলেটিন অনুযায়ী, ১ এপ্রিল রাজ্যে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ১২৭৪।
রোববার রাজ্যে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৮৪১৯ জন। এদিন কলকাতায় করোনা শনাক্ত হয় ২১৯৭ জনের শরীরে।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কোনো অতিমারির ইতিহাস পড়লে জানা যায়, প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে, দ্বিতীয় ঢেউয়ে সেটি মারাত্মক আকার ধারণ করে।
পশ্চিমবঙ্গে সে প্রমাণই মিলছে। কলকাতা শহরের হাসপাতালগুলোতে বেড়েই চলেছে কোভিড রোগীর ভিড়। দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। শয্যা না পেয়ে অনেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
চিকিৎসক কুনাল সরকার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কলকাতা শহরজুড়ে শয্যা, অক্সিজেন আর টিকার জন্য হাহাকার চলছে। রাজনৈতিক উন্মাদনার মধ্যে চাপা পড়ে যাচ্ছে বাঁচার জন্য মানুষের আর্তচিৎকার।
তিনি আরও বলেন, খবরে করোনা সংকটের যে ছবিটা আসছে, পরিস্থিতি তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।
রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, সরকারি হাসপাতালে ২০ শতাংশ এবং বেসরকারি হাসপাতালে ২৫ শতাংশ শয্যা বাড়াতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের খবর অনুযায়ী, রাজ্যে এই মুহূর্তে ৭৬৭৬টি শয্যা আছে। যার প্রায় ৪৫ শতাংশ ভরে গেছে।
এই প্রেক্ষাপটে সোমবার এক টুইটে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি লেখেন, ‘করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকার সব রকমের ব্যবস্থা নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে, টিকা, ওষুধ ও অক্সিজেন পাঠানোর আর্জি জানিয়য়েছি।’
রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় তথ্য নিয়ে রাজভবন গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে কোভিড মোকাবিলায় রাজ্যের পদক্ষেপ নিয়ে বৈঠক করেন। এর আগে রাজ্যপাল করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের পদক্ষেপ জানতে চেয়ে মুখ্যসচিবকে টুইট করেন ।
এদিকে করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে তৃণমূল নেত্রী কলকাতা শহরে বড় কোনো কর্মসূচি নেবেন না। শুধু বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের শেষ দিন ২৬ এপ্রিল কলকাতায় তিনি একটি প্রতীকী সভা করবেন বলে তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সোমবার এক জরুরি বৈঠকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করে আলিপুরে উত্তীর্ণ ভবনে করোনা মোকাবিলায় ৫০০ শয্যার সেফ হোম তৈরির কথা ঘোষণা দেন।
এদিকে মালদায় ওই সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আরও বলেন, সাড়ে ৪ হাজার কোভিড শয্যা বাড়ানো হচ্ছে। ২০০ সেফ হোমে ১ হাজার ১০০ শয্যা রয়েছে। রাজ্যজুড়ে ৪০০ অ্যাম্বুলেন্স কোভিড পরিষেবায় নিযুক্ত থাকবে।
তিনি বলেন, ‘কমিশনের কাছে হাতজোড় করে, অনুরোধ করছি, একদিনে ভোট করিয়ে দিন। মানুষের জীবন নিয়ে খেলবেন না। করোনা নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন।’
পাল্টা আক্রমণ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। তিনি বলেন, ‘কোভিড নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে উপস্থিত থাকে না মমতা। তবে নির্বাচন কমিশন যা সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা তা মেনে চলব।’
এদিকে রাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি সভা বাতিল হচ্ছে না। বাকি চার সভা ২৩ এপ্রিল ১ দিনেই হবে এবং তা কোভিড প্রটোকল মেনেই হবে বলে বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ভারতীয় রেল শিয়ালদহ হাওড়া শাখায় লোকাল ট্রেনের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে। চালক ও গার্ড করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
রাজ্যের সব সরকারি স্কুলে মঙ্গলবার থেকে গরমের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নবম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস চলছিল। এক শ্রেণির মানুষের ঢিলেঢালা আচরণে ভাইরাস নিজেকে আরও বেশি শক্তিশালী করে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।
এদিকে করোনা আক্রান্ত ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। দিল্লির এইমস-এ তার চিকিৎসা চলছে।