করোনাভাইরাস ও নির্বাচনি সন্ত্রাসের দ্বিমুখী আক্রমণে বিপর্যস্ত হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের জনজীবন।
রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। বাকি আছে আরও তিন দফার ভোট। তবে এরই মধ্যে যেভাবে রাজনৈতিক সংঘর্ষ শুরু হয়েছে, তাতে আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন রাজ্যের মানুষ।
রাজ্যের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, এবার নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ঘটনা অনেক বেশি হবে। কারণ প্রধান দুটি দল বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের পরস্পরবিরোধী হাইভোল্টেজ প্রচার, যা অনেক সময়ই ছিল অগণতান্ত্রিক, অশালীন এবং একে অপরকে দেখে নেয়ার হুমকিতে পরিপূর্ণ।
দুই দলের কর্মীরা প্রচারের সময় নেতাদের বক্তব্য শুনে নিজেদের তৈরি করে রেখেছেন ২ মে ফল ঘোষণার পরবর্তী কর্মসূচির জন্য। সেসব কর্মসূচি অহিংস হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
১৭ এপ্রিল পঞ্চম দফা ভোটগ্রহণ শেষে কলকাতা সংলগ্ন বিধাননগর, নদীয়ার চাকদহ, বর্ধমান শহরের বিভিন্ন অংশ, উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁ বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুজন বিজেপি কর্মী খুন হওয়ারও অভিযোগ আসে।
রোববার আক্রান্ত হন বিজেপির দুজন প্রার্থী। কলকাতায় বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবের ওপর হামলা হয়। গুলিবিদ্ধ হন মালদহ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী গোপালচন্দ্র সাহা।
হাইভোল্টেজ প্রচারের আবহে তৈরি হওয়া উত্তেজনার আগুনে ধিকি ধিকি জ্বলছে বাংলার জনজীবন। নির্বাচন শেষে তা আরও ব্যাপক হতে পারে।
নির্বাচনকে ঘিরে একদিকে সহিংসতা আর অন্যদিকে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কা যখন আছড়ে পড়েছে দেশে, তখন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ব্যস্ত ছিলেন নির্বাচনি প্রচারে।
‘গণতন্ত্রের উৎসব’ বলে সংবাদমাধ্যম ব্যস্ত থেকেছে ভোটযুদ্ধ নিয়ে। কারোর মুখে শোনা যায়নি করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ নিয়ে একটি শব্দ।
গত বছরই চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ২০২১ সালে আছড়ে পড়বে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা। কিন্তু ক্ষমতা দখল বা ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াইয়ে করোনার সংক্রমণ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।
সংক্রমণ রোধে প্রস্তুত থাকা বা সংক্রমিত মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা- কোনো ক্ষেত্রেই দূরদর্শী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারকে। এরই মধ্যে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো ২৯৪টি আসনের জন্য আট দফায় ভোটগ্রহণের নির্বাচন কমিশনের ফরমান।
প্রায় দেড় মাস ধরে নির্বাচনি প্রচার যুদ্ধে সমাবেশ, রোড শো, মিছিলে হাজার হাজার মানুষ কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি ছাড়াই অংশ নিয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দল কর্মী-সমর্থকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।
রোববার ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনায় সংক্রমিত হয়েছে ৮ হাজার ৪১৯ জন। পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক সংক্রমণের ক্ষেত্রে এটাই সর্বোচ্চ। ওই দিন দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায় বিজেপি নেতা অমিত শাহ রোড শো করেন।
রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের বুলেটিন অনুযায়ী, রোববার কলকাতায় নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ১৯৭ জন৷ উত্তর ২৪ পরগনায় একদিনে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৮৬০ জন।
কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনায় মৃত্যু হয়েছে যথাক্রমে পাঁচ এবং ছয় জনের৷ এমন পরিস্থিতিতে রোববার রাতে অবশেষে মমতা নিজেই তার নির্বাচনি কর্মসূচি কাটছাঁট করেন। তার ঘোষণা, কলকাতায় আর কোনো বড় সভা বা মিছিল করবেন না তিনি। শুধু একটিই করবেন উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রিটে। জেলাগুলোতে নিজের বক্তব্য ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চান মমতা, যাতে বেশিক্ষণ এক জায়গায় ভিড় জমে না থাকে।
এদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে বাংলায় জনসভার সব কর্মসূচি বাতিল করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। অন্য সব দলের নেতাদেরও বর্তমান পরিস্থিতিতে বড় কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া উচিত কি না, তা ভেবে দেখতে অনুরোধ জানান তিনি।