বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মমতার ফোনালাপ ফাঁস: পশ্চিমবঙ্গে তোলপাড়

  •    
  • ১৭ এপ্রিল, ২০২১ ২০:১৭

‘৫ জনের মৃত্যুর পর দিদি রাজনীতি করছেন। সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে অডিও। লাশ নিয়ে রাজনীতি দিদির পুরোনো অভ্যেস। ফোনে দিদি কোচবিহারের টিএমসি নেতাকে বলছেন মৃতদেহ নিয়ে মিছিল করো। মরদেহ নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দার কথা ভাবছেন দিদি।’ 

একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে দরবার শাসক ও বিরোধীদলের। এমনটাই ঘটেছে শনিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিজেপি সাংসদ লকেট চ্যাটার্জি এবং দলের আই সেলের প্রধান অমিত মালব্য এক জরুরি সাংবাদিক বৈঠক করে একটি ফোনালাপ প্রকাশ করেন।

এতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং শীতলকুচির তৃণমূল প্রার্থী পার্থপ্রতিম রায়ের মধ্যে কথপোকথন শোনা যায়। এটি প্রকাশ করে গেরুয়া শিবিরের নেতার দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছেন। শীতলকুচির ঘটনাকে হাতিয়ার করে রাজ্যের ভোটে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা করারও অভিযোগ তোলে বিজেপি।

ওই সাংবাদিক বৈঠকের এক ঘণ্টার মধ্যে পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সদস্য সুখেন্দু শেখর রায় ও ডেরেক ও’ ব্রায়ান। তারা প্রশ্ন তোলেন, মুখ্যমন্ত্রীর ফোন ট্যাপ করা হলো কীভাবে?

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও শনিবার আসানসোলে ভোট প্রচারে বিতর্কিত ফোনালাপের প্রসঙ্গ তোলেন। তার কথায়, ‘কয়েকদিন ধরে দিদির (মমতা) মধ্যে অসংবেদনশীলতা দেখেছি। কোচবিহারে যা হয়েছে, সে নিয়ে একটা অডিও টেপ আপনারা শুনেছেন কাল।

৫ জনের মৃত্যুর পর দিদি রাজনীতি করছেন। সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে অডিও। লাশ নিয়ে রাজনীতি দিদির পুরোনো অভ্যেস। ফোনে দিদি কোচবিহারের টিএমসি নেতাকে বলছেন মৃতদেহ নিয়ে মিছিল করো। মরদেহ নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দার কথা ভাবছেন দিদি।’

শনিবার পঞ্চম দফার ভোটের আগের রাতে বিজেপির প্রকাশ করা অডিও ক্লিপ ঘিরে রীতিমতো সরগরম হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। কী আছে সেই অডিও ক্লিপে?

বিজেপির দাবি, এটি শীতলকুচির ঘটনার ঠিক পরেই পার্থপ্রতিম রায়ের সঙ্গে মমতার ফোনালাপের অডিও। যাতে পার্থর উদ্দেশে একাধিক নির্দেশ দিতে শোনা গিয়েছে মমতাকে। মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গেছে, ‘‌সবকটা সিআরপিএফকে গ্রেপ্তার করাব। ডেডবডিগুলো এখন রেখে দাও। আজকে পরিবারগুলোকে বলবে, কেউ ডেডবডি নেবে না। কালকে ডেডবডিগুলো নিয়ে র‍্যালি হবে।’‌

এরপর পার্থপ্রতিমের উদ্দেশে মমতাকে বলতে শোনা গেছে, ‘‌তুমি এক কাজ করো, পুরো এফআইআর করবে। আইনজীবীকে দিয়ে, নিজের ইচ্ছামতো করবে না। বাড়ির লোক যে এফআইআর করবে, সেটা আমি বলে দেব ভোটের পর।

‘এখনই পুলিশ বয়ান নিতে গেলে দেবে না। ভালো করে এফআইআর করতে হবে। যাতে কম্যান্ড জোন থেকে শুরু করে এসপি থেকে শুরু করে, সবকটা ফাঁসে।’‌

এই অডিও ক্লিপকে হাতিয়ার করে অমিত মালব্য দাবি করেন, ‘‌মমতা আর পার্থপ্রতিমের এই ফোনালাপ থেকেই স্পষ্ট, শীতলকুচিতে বুথ দখলের চেষ্টা করছিল তৃণমূল। মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে মমতা। এই ঘটনাকে নির্বাচনে সম্পূর্ণ মেরুকরণের চেষ্টা করছে তৃণমূল। সংখ্যালঘু তোষণের চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী।’‌

যার পাল্টা তৃণমূলের তরফে আসরে নামেন দুই সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন এবং সুখেন্দু শেখর রায়।

তাদের প্রশ্ন, ‘‌আমাদের দেশে যে কেউ চাইলে যেকোনো লোকের ফোন ট্যাপ করতে পারে। বহিরাগত বর্গি এই ফোনগুলো ট্যাপ করে। বিজেপির মিথ্যে প্রচারের ফ্যাক্টরির মালিক এই বর্গিরা। বহিরাগত বর্গিরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে।’‌

শুধু তাই নয়, শীতলকুচি প্রসঙ্গেও একাধিক প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। সুখেন্দু শেখরের প্রশ্ন, ‘‌শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালিয়েছিল নাকি চালায়নি? চালালে কিসের ভিত্তিতে চালাল? আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালালে তার ভিডিও ফুটেজ কোথায়? আইন অনুযায়ী বলা আছে, ভিড় নিয়ন্ত্রণে যত সম্ভব কম বল প্রয়োগ করতে হবে। সেটা কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন মানল না?’‌

শনিবার সকালে বিতর্কিত অডিও ক্লিপ নিয়ে দুই পক্ষই পৌঁছে যায় নির্বাচন কমিশনে। সকালে নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে যান বিজেপির স্বপন দাসগুপ্ত ও শিশির বাজোরিয়া। সেখান থেকে ফোন ট্যাপের অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি।

কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ফোন ট্যাপের অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘কলার ও রিসিভারের মধ্যেই কেউ ফোন রেকর্ড করেছে। এই কল রেকর্ডিং করে অন্য কৌশল নিয়েছে শাসকদল।’

নির্বাচন কমিশনে যান রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ডেরেক ও’ ব্রায়ান, সদ্য তৃণমূলে যোগ দেয়া যশবন্ত সিন্‌হা এবং দলীয় নেতা পূর্ণেন্দু বসু। তৃণমূল কংগ্রেস কমিশনের কাছে তাদের অভিযোগে জানিয়েছে, বিজেপির নির্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর ফোনে আড়িপাতা হয়েছে এবং কথোপকথন রেকর্ড করা হয়েছে।

এই ঘটনা ভারতীয় সংবিধান, ১৮৮৫ সালের ভারতীয় টেলিগ্রাফ আইন, ২০০০ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইন এবং ১৮৬০ সালের ভারতীয় দণ্ডবিধি লঙ্ঘন করেছে বলেও অভিযোগপত্রে জানিয়েছে তৃণমূল।

ভারতীয় ফৌজদারি আইন অনুযায়ী, মামলা করে আলাদা করে এই ঘটনার বিচারের দাবিও জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পূর্ণেন্দু বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর ফোনে আড়ি পেতে অডিও টেপ ফাঁস করেছে বিজেপি। এটা বেআইনি। সাংবিধানিক অধিকার খর্ব হয়েছে। আমরা এর বিরুদ্ধেই কমিশনে নালিশ করেছি।’

তার প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রীর ফোন যদি ট্যাপ না করা হয়, তা হলে কীভাবে একটি রাজনৈতিক দলের কাছে কথোপকথন পৌঁছে গেল?

এ বিভাগের আরো খবর