বিশ্বের সব রেকর্ড ভেঙে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের তীব্রতা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে ভারতে। তারপরও কুম্ভ স্নান বা মেলা থেকে বিধানসভা নির্বাচনি প্রচার, কোনো কিছুই থেমে নেই।
পাঁচটি রাজ্যে নির্বাচনি প্রচার চলেছে পুরোদমে, কোভিড-১৯ নিষেধাজ্ঞা বা স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই। এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে বিধানসভা নির্বাচনের তিনজন প্রার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এর ছায়া পড়েছে নির্বাচনি প্রচারে।
সবশেষ বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সামশেরগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী রেজাউল হকের। শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে বুধবার রাতে তাকে জঙ্গিপুর থেকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নেয়া হয়েছিল।
দুই দিন আগে মৃত্যু হয় ওড়িশার পিপিলি বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী অজিত মঙ্গরাজের।
এর আগে ১১ এপ্রিল মৃত্যু হয় তামিলনাড়ুর শ্রীভিল্লিপুথুর বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী পি এস ডব্লিউ মাধবরাওয়ের।
তামিলনাড়ুর ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এখনও চার দফার ভোটগ্রহণ পর্ব বাকি আছে। বাকি থাকা ভোটগ্রহণের জন্য নির্বাচনি প্রচারে লাগাম টানতে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
নির্বাচন কমিশন সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছে করোনা সংক্রমণের আবহে ভোটের প্রচারে স্বাস্থ্যবিধি কড়াভাবে মানার উপায় খুঁজতে। কমিশনের একটি শীর্ষ সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, চার দফার ভোটগ্রহণকে এক বা দুই দফায় শেষ করা যায় কিনা, তা নিয়েও চিন্তাভাবনা করছে নির্বাচন কমিশন।
সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের উদ্বেগে রেখেছে আরেকটি পরিসংখ্যান। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আগের থেকে বেশি সংক্রমিত হচ্ছে শিশুরা। গত বছরে যা হয়নি, এবার তাও হলো।
দেড় মাসের শিশুও করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। দিল্লিতে ১ লাখ ৮ হাজার ৫৩৪ জনের করোনা নমুনার পরীক্ষা হয়েছে। সংক্রমণের হার ১৫ দশমিক ৯২। রাজধানীর একটি হাসপাতালেও কোনো শয্যা খালি নেই। কবরস্তানে কোভিড রোগী সমাহিত করার যথেষ্ট জায়গাই নেই। শ্মশানে মরদেহ দাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মীরা।
এই প্রেক্ষাপটে শিশুদের সংক্রমণের হার বৃদ্ধি সত্যিই উদ্বেগজনক। স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক ধীরেন গুপ্তা বলেন, ‘এই ঢেউয়ে শিশুদের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে পাঁচ গুণ শিশু ভর্তি হচ্ছে। আইসিইউতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে তিন মাসের শিশুও। সব থেকে বেশি আক্রান্ত ১ থেকে ৫ বছরের শিশুরা।’
একই কথা বলেন, বসন্ত কুঞ্জের ফোর্টিস হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ রাহুল নাগপাল। শিশুদের সংক্রমণের লক্ষণগুলো হলো প্রচণ্ড জ্বর, ডায়রিয়া, মাথা যন্ত্রণা ও বমি।
দিল্লিতে পঞ্চম দফার সেরো সার্ভেতে দেখা গেছে, ৫০ শতাংশ শিশুর শরীরেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ তারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে গিয়েছে অজান্তেই। ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী ১ হাজার ৩০৭ জন শিশুর অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাতেই এই ফল পাওয়া যায়।