ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপ শেষ হয়েছে। বাকি আরও চার ধাপ। ১৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে পঞ্চম ধাপের ভোট। কিন্তু এর আগেই নির্বাচনি প্রচার থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য বিরত থাকতে বলা হয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
‘অত্যন্ত কটাক্ষমূলক ও উত্তেজক মন্তব্যের’ কারণে সোমবার রাত ৮টা থেকে মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রীর ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। মমতার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমসসহ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
নির্বাচনি প্রচার থেকে ২৪ ঘণ্টা নিষিদ্ধ থাকার নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন মমতা। সোমবার এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘ভারতের নির্বাচন কমিশনের অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কাল (মঙ্গলবার) দুপুর ১২টা থেকে কলকাতার গান্ধী মূর্তিতে আমি অনশনে বসব।’
গত সপ্তাহে ৬৬ বছর বয়সী মমতাকে দুইটি নোটিশ দেয় নির্বাচন কমিশন। এতে গত ২৮ মার্চ ও ৭ এপ্রিলের নির্বাচনি সমাবেশে মমতার বক্তৃতার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। কমিশনের অভিযোগ, ওই দুই দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছে বলে বাহিনীকে আক্রমণ করতে বা নিরাপত্তা সদস্যদের ঘিরে ফেলতে নারীদের প্রতি আহ্বান জানান মমতা। এ ছাড়া মুসলমান ভোটারদের ক্ষেত্রে তিনি নির্বাচনি বিধি লঙ্ঘন করেন।
২৮ মার্চের সমাবেশে মমতা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় পুলিশ নারীদের ভোট দিতে দিচ্ছে না। তাদের ভয় দেখানো হচ্ছে। এত ক্ষমতা তাদের কে দিয়েছে? ২০১৬ ও ২০১৯ সালেও আমি এ ধরনের ঘটনা দেখেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি, কার নির্দেশে তারা জনগণকে পেটাচ্ছে। আমাদের কোনো মা-বোন যদি একটি লাঠির আঘাত পায়, তাহলে তাদের (কেন্দ্রীয় বাহিনী) হাতা, খুন্তি ও ছুড়ি দিয়ে আঘাত কর। আমি বলছি, এটা নারীর অধিকার। ভোটকেন্দ্রে আমাদের মা-বোনদের ঢুকতে দেয়া না হলে, আপনারা সবাই তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবেন।’
কোচবিহারে সেন্ট্রাল রিসার্ভ পুলিশ ফোর্সেসের (সিআরপিএফ) বিষয়ে মমতা ‘খুবই আপত্তিকর মন্তব্য’ করেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নারীদের উদ্দেশে সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘সিআরপিএফ কোনো ঝামেলা করলে, আপনাদের একদল তাদের ঘেরাও করবেন আর বাকিরা ওই সময় ভোট দেবেন। আপনাদের ভোট নষ্ট করবেন না। আপনারা তাদের প্রতিহত করাতেই ব্যস্ত থাকলে আপনাদের ভোট দেয়া হবে না। এতে তারা খুশি হবে। এটা তাদের পরিকল্পনা, এটা বিজেপির পরিকল্পনা।’
নির্বাচন কমিশনের ভাষ্য, মমতার এসব ‘মিথ্যা, উত্তেজক ও অসংযত বক্তব্যের’ মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বাহিনীর মানহানি হয়েছে।
আরেকটি নোটিশের অভিযোগ, মমতা খোলামেলাভাবে সাম্প্রদায়িক ভিত্তি ব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের কাছ থেকে ভোট চান।
এপ্রিলে হুগলির এক সমাবেশে মমতা বলেন, ‘আমার সংখ্যালঘু ভাই ও বোনদের প্রতি অনুরোধ, যারা বিজেপির কাছ থেকে টাকা খেয়েছে, তাদের কথা শুনে ভোট কমাবেন না। তিনি অনেক সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দেন। হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা লাগান। সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করতে বিজেপির টাকা খেয়ে সিপিএমের কমরেডরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’
নির্বাচন কমিশন বলছে, ওই দুই নোটিশে মমতার জবাব ছিল অবজ্ঞাসূচক।