ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখলের জন্য বিজেপির নতুন কৌশল ‘মাইন্ড গেমস’-এর পাশাপাশি চলছে ভোট লুটের প্রক্রিয়া।পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দুই দফা ভোটগ্রহণের পর থেকেই মাইন্ড গেমসের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বারবার বলে চলেছেন, ‘নিশ্চিত হয়ে গেছে রাজ্যের ক্ষমতায় আসীন হচ্ছে বিজেপি।’ সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বর্ধমান, কল্যাণী, বারাসতে তিনটি জনসভায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘হাফ ভোটেই সাফ তৃণমূল। চার দফাতেই সেঞ্চুরি পার করেছে বিজেপি। দিদি হেরে গেছেন। খেলার কথা বলেছিলেন উনি। উনার সঙ্গেই খেলা হয়ে গেছে। নন্দীগ্রামে ক্লিন বোল্ড হয়ে গেছেন দিদি।’ এসব বাক্যবাণ আসলে বিজেপির নতুন কৌশল। এটি মাইন্ড গেমসেরই অংশ। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মুখ থেকেই প্রথম শোনা গিয়েছিল এই ‘মাইন্ড গেমসের’ কৌশলের কথা। বঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে এসে এক কর্মিসভায় আদিত্যনাথ বলেছিলেন, ‘আমাদের মাইন্ড গেমস খেলতে হবে। দলের কর্মীদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে যেতে হবে বিজেপিই জিতছে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে। বারবার এ কথা বললে, ভোট কাকে দেবেন, এই ভাবনায় যারা দোদুল্যমান অবস্থায় আছেন, তাদের ওপর একটা মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। এই অংশের ভোটাররা জয়ের সম্ভাবনা থাকা প্রার্থীর দিকেই ঝুঁকে পড়েন।’যোগী আদিত্যনাথের এই ‘মাইন্ড গেমস’ তত্ত্ব কর্মিসভায়ই আবদ্ধ থাকেনি। নানা সূত্রে তা প্রকাশ হয়ে গেছে। ওই তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রথম দুই দফা ভোটগ্রহণের দুই দিন পর থেকেই অমিত শাহ বলতে শুরু করেন দুই শতাধিক আসনে জিতবে বিজেপি।১৭ এপ্রিল ৪৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট হবে। বর্ধমান, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, নদীয়া ও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর বেশ কয়েকটি আসনে হবে এই ভোট। বেশ কিছু আসন অতি স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বিজেপি নেতারা যে দাবিই করুন না কেন, প্রয়োজন ও সুযোগ বুঝে তাদের দলও ভোট লুটের প্রচলিত পদ্ধতি প্রয়োগ করে চলেছে। ভোটকে কেন্দ্র করে খুনখারাবি বা অশান্তি এই রাজ্যে নতুন কোনো কিছু নয়। ১০ বছর আগে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে ভোট লুটের অভিযোগ উঠত। গত এক দশকে নানা স্তরের ভোটে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বুথ দখল, ভোট ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে বারবার। এবার ‘আসল পরিবর্তনের’ স্লোগান দেয়া বিজেপিও সেই একই খেলায় মেতে উঠেছে। ফলে গত চার দফায় যেভাবে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তাতে আগামী চার দফাতেও শান্তিপূর্ণ ভোট নিয়ে বিরাট প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।ভোটের আগে থেকেই ‘খেলা হবে’ স্লোগানে মেতেছে বাংলা। তবে কী ‘খেলা হবে’ তা খোলাসা করেননি কেউই। কেউ আবার বলেছেন, ভয়ংকর খেলা হবে। এবার প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি জোরদার খেলা শুরু হয়ে গেল? জোর করে অ্যাজেন্ট বসতে না দেয়ার অভিযোগ উঠছে নানান বুথে। প্রার্থীরা ধরনায় বসে পড়ছেন কেউ বুথে তো কেউ রাস্তায়। কোনো কোনো প্রার্থী নিত্য আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটেছে অশান্তির ঘটনা। কিছুতেই থামছে না রাজনৈতিক হিংসা। দফা বাড়িয়েও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না অশান্তি।একে অপরের বিরুদ্ধে ছাড়াও নির্বাচন কমিশন, কেন্দ্রীয় বাহিনী ও অন্যদিকে রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনকে দায়ী করছে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো। অভিজ্ঞ মহলের মতে, দায় এড়াতে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ চলতেই থাকবে। তবে গণতন্ত্রের এই উৎসবে রক্তের হোলি খেলা বন্ধ হওয়া উচিত।দেশের অন্য কোনো রাজ্যে ভোটকে কেন্দ্র করে এমন প্রাণহানি বা হিংসার ঘটনা এখন অতীত। পশ্চিমবঙ্গে ভোট সন্ত্রাসের এমন বাড়াবাড়ি বন্ধ করতে সবার সক্রিয় হওয়া বিশেষ প্রয়োজন।
পশ্চিমবঙ্গ জয়ে বিজেপির ‘মাইন্ড গেম’
মাইন্ড গেমস হলো অন্যের উপলব্ধিকে দুর্বল করে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার আক্রমণাত্মক আচরণ। নিজের বিশ্বাস, ভাবনাকে আগ্রাসী আচরণে বৈধতা দিয়ে দোদুল্যমান মানসিক অবস্থানকে নির্দিষ্ট পথে টেনে নিয়ে যাওয়া।
-
ট্যাগ:
- ভারত
এ বিভাগের আরো খবর/p>