করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। এর মধ্যে পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বা বিধিনিষেধ উল্লেখযোগ্য। পাকিস্তান থেকে আগত যাত্রীদের ওপর এ ধরনের বিধিনিষেধের সমালোচনা করেছেন যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড ওয়েস্ট এলাকার পাকিস্তান বংশোদ্ভূত সংসদ সদস্য ও লেবার পার্টির রাজনীতিক নাজ শাহ।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক র্যাবকে লেখা চিঠিতে নাজ এ সমালোচনা করেন বলে রোববার ডনের প্রতিবেদনে জানানো হয়। ফ্রান্স, ভারত ও জার্মানির চেয়ে পাকিস্তানে সংক্রমণের হার যথেষ্ট কম। তা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের বিষয়ে দেশটিকে লালতালিকায় কেন রাখা হয়েছে, চিঠিতে তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন ব্রিটিশ ওই এমপি।
চিঠিতে ওই তিন দেশের করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি তুলে ধরে নাজ বলেন, ‘ফ্রান্স, জার্মানি ও ভারতে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে যথাক্রমে ৪০৩, ১৩৭ ও ২৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হচ্ছে। অন্যদিকে পাকিস্তানে প্রতি এক লাখে সংক্রমণের সংখ্যা কেবল ১৩। বৈজ্ঞানিক কোন ডাটার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে?
‘দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনার ধরন পাকিস্তানে পাওয়া যায়নি। ফ্রান্সে সেটি পাওয়া গেছে। লালতালিকায় ফ্রান্স, জার্মানি বা ভারতের নাম নেই কেন?’
নাজ শাহ জানান, লালতালিকায় পাকিস্তানের নাম অন্তর্ভুক্তকরণের সরকারের নেয়া সিদ্ধান্তে মনে হয়েছে, তালিকাটি নিয়ে সরকারের কোনো সুসংহত কৌশল নেই। তথ্য-উপাত্ত নয়, বরং রাজনীতিই এ তালিকা প্রণয়নে কাজ করেছে।
পাকিস্তানকে ঘিরে যুক্তরাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্পষ্টতা ও প্রশ্নের জবাব চেয়ে চিঠিতে নাজ আরও বলেন, ‘পাকিস্তান ও এর অভিবাসী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জেনেশুনে ও সচেতনভাবে বৈষম্যমূলক অবস্থান নেয়া হয়েছে।’
এর আগে যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ৯ এপ্রিল থেকে সরকার অনুমোদিত হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকাকালে কয়েকটি দেশ থেকে আগত ভ্রমণকারীদের অর্থ পরিশোধ করতে হবে। ওই সব দেশের মধ্যে পাকিস্তানের নামও রয়েছে।
যুক্তরাজ্য সরকার আরও জানায়, পাকিস্তানের জনগণ যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে তারা ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের নাগরিক হলে বা তাদের আবাসনের অধিকার থাকলে সে ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করা যাবে। হোটেল রুমে ১০ দিন কোয়ারেন্টিন থাকার সময় একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে ১ হাজার ৭৫০ পাউন্ড দিতে হবে। এ ছাড়া প্রতি যাত্রীকে বাধ্যতামূলক করোনার পরীক্ষা করাতে আরও ২১০ পাউন্ড পরিশোধ করা লাগবে।
এদিকে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী আসাদ উমর শনিবার টুইট বার্তায় বলেন, ‘নিজের জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার প্রতিটি দেশেরই রয়েছে। তবে পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশকে লালতালিকায় রাখার যুক্তরাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত ন্যায়সংগত একটি প্রশ্নকে সামনে হাজির করেছে- বিজ্ঞান না পররাষ্ট্রনীতি, কোনটির ওপর ভিত্তি করে ওই সব দেশকে লালতালিকায় রাখা হয়েছে?’