মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন দেশটির ১০টি প্রধান ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহতের সংখ্যা ৫৫০ ছাড়ানোর পরই এলো এ ঘোষণা।
এ কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে, কয়েক দশকের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা আর চলমান বিক্ষোভ একাকার হয়ে নতুন মাত্রা নেবে মিয়ানমার সংকট। ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রায় অচল।
শনিবার ১০টি বিদ্রোহী সংগঠনের নেতারা মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। এতে বিক্ষোভ দমনে শক্তি প্রয়োগ ও বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচার গুলি ছোড়ায় সেনাবাহিনীর নিন্দা জানান তারা।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী দ্য রিস্টোরেশন কাউন্সিল অফ শান স্টেটের প্রধান জেনারেল ইয়াওদ সের্ক বলেন, ‘সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’
গত সপ্তাহে মিয়ানমারের সশস্ত্র ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে এক মাসের অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করে সেনাবাহিনী। অবশ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও প্রশাসনিক কারণে এর ব্যতিক্রম হতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয় সে ঘোষণায়।
এ প্রসঙ্গে জেনারেল ইয়াওদ বলেন, ‘অস্ত্রবিরতির অর্থ হলো বিক্ষোভকারীসহ যে কারও বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতা স্থগিত করা। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরতম জনতার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি আমরা।’
গত সপ্তাহেই মিয়ানমার গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এবং যেকোনো মুহূর্তে দেশটিতে রক্তের বন্যা বয়ে যেতে পারে বলে নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করেন জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত অং সান সু চির বেসামরিক সরকারের মধ্যস্থতায় জাতীয় অস্ত্রবিরতির চুক্তিও পর্যালোচনা করা হয় ভার্চুয়াল এ বৈঠকে।
মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চলে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে কয়েক দশক ধরে সংঘাতরত সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছিল সু চি সরকার। চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করা ১০টি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মিয়ানমারের সীমান্তের বড় অংশ। অনাস্থার কারণে চুক্তির বিরোধিতা করে আরও কমপক্ষে ১০টি সংগঠন।
বিচ্ছিন্নতাবাদবিরোধী সেনা অভিযান
গত সপ্তাহে মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলীয় ক্যারেন প্রদেশে একটি সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেয় ক্যারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) নামের একটি সশস্ত্র সংগঠন। হত্যা করে ১০ সেনা কর্মকর্তাকে। পরে সেখানে বিমান হামলা চালায় সেনাবাহিনী।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কট্টর বিরোধী কেএনইউ হাজারো গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীকে আশ্রয় দিচ্ছে বলেও শোনা যাচ্ছে।
শনিবার গোষ্ঠীটি দাবি করে, ২৭ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত চার দিনের অব্যাহত বিমান ও বোমা হামলায় প্রাণ গেছে শিশুসহ বিপুলসংখ্যক নিরস্ত্র মানুষের। সেনা অভিযানের ফলে আরও ১২ হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়েছে বলেও জানায় গোষ্ঠীটি।
জবাবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জাও মিন তুনের দাবি, ‘সামরিক ঘাঁটির দখল নেয়া কেএনইউয়ের পঞ্চম ব্রিগেডের বিরুদ্ধেই শুধু অভিযান হয়েছে, তাও কেবল একদিন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় অস্ত্রবিরতির চুক্তি স্বাক্ষর করেছি আমরা। বিদ্রোহীরা যদি তা মেনে চলত, তাহলে সহিংসতার কোনো কারণই থাকত না।’
গত কয়েক দিনে প্রদেশটিজুড়ে একের পর এক বিমান ও বোমা হামলার খবর জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাও।
‘এই উন্মাদনা থামাতেই হবে’
প্রায় ৫০ দিন ধরে চলা বিক্ষোভ দমনে এ পর্যায়ে এসে ওয়াইফাই ও মুঠোফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। বিশেষ করে রাতে ইন্টারনেট সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ফলে দেশটিতে তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় অচল রয়েছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় টুইটারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দূত টম অ্যান্ড্রুজ লিখেছেন, ‘এই উন্মাদনা থামাতেই হবে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর আয় ও অস্ত্র কেনা বন্ধে নিষেধাজ্ঞার কোনো বিকল্প নেই।’