ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বেড়েই চলেছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি মহারাষ্ট্রে। সংক্রমণ ঠেকাতে এই রাজ্যে আবার লকডাউন ঘোষণা করা হতে পারে।
শনিবার ভারত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমণ ৮৯ হাজার ১২৯। গত সেপ্টেম্বরের পর শনাক্তের দিক থেকে এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যা। তাই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আটকাতে আবারও লকডাউনের পথেই হাঁটবে সরকার?
ভারতের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে মহারাষ্ট্রের করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। শুক্রবারই নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৪৭ হাজার ৮২৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ২১২ জনের। গত বছর মহামারি ঘোষণার পর থেকে একদিনে আক্রান্তের এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা। সংক্রমণ রোধে লকডাউন জারির সম্ভাবনা প্রকট হচ্ছে। তবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে এখনও লকডাউন ঘোষণা দেননি।
পরিস্থিতি পর্যালোচনায় চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে শনিবারই মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক করার কথা। শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে করোনা রোধে আরব সাগর তীরের এই রাজ্যে আবার লকডাউন দেয়া হবে কিনা।
মহারাষ্ট্রের বড় বেশ কয়েকটি শহরে এরই মধ্যে রাত্রিকালে কারফিউ জারি করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত জরুরি পরিষেবা ছাড়া সিনেমা হল, রেস্তোরাঁ, শপিং মল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। ফের লকডাউন এড়াতে স্বাস্থবিধি মেনে চলার জন্য রাজ্যের সব প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
দিল্লিও পিছিয়ে নেই। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আক্রান্ত ৩ হাজার ৫৯৪। কিন্তু দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, এখনই লকডাউন নয়।
কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশের সরকার নতুন কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। স্কুলে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে বেঙ্গালুরু প্রশাসন। কর্ণাটকের প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষামন্ত্রী সুরেশ কুমার জানিয়েছেন, সংক্রমণ বাড়ছে এবং পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
দেশজুড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেই বেশ কয়েকটি রাজ্যে চলছে বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনের প্রচারে বহু ক্ষেত্রেই কোভিড বিধি মানছেন না রাজনৈতিক নেতা–কর্মীরা। সচেতনতা বাড়ানোর কথা প্রচার করা হলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। করোনা বাড়ার এটাও কারণ।
এর পাশাপাশি আরেকটি বিষয় হলো গত বছর লকডাউন ঘোষণা করা হলেও সেই সময় থেকেই ব্যাপকহারে বাড়তে শুরু করে করোনার সংক্রমণ। তাই এবার লকডাউন জারি করলে করোনা সংক্রমণ কতটা নিয়ন্ত্রণে আসবে তাও খতিয়ে দেখতে হবে।
গত বছর লকডাউন জারি করার পরও সংক্রমণের হার সারা দেশেই বেড়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, ওই সময় লকডাউন জারি না করা হলে করোনা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করত।
চিকিৎসকদের মতে, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ুতে যে হারে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তা থেকে সহজেই বোঝা যায়, শুধু লকডাউন বা রাত্রিকালে কারফিউ জারি করে করোনা অতিমারি আটকানো সম্ভব নয়।
করোনা মোকাবিলায় একমাত্র পথ হতে পারে দ্রুত সবাইকে টিকা কার্যক্রমের আওতায় আনা। পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। বাড়াতে হবে করোনার পরীক্ষা।