ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য শুরুর সব সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
শুক্রবার দেশটির মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে ইমরান খানের বরাত দিয়ে এ কথা জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি।
দেশটির গণমাধ্যম জিও-নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মন্ত্রিসভায় উপস্থিত সবাই এই বিষয়ে মতৈক্যে পৌছেঁছেন।
ইমরান খানের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের অধিকৃত’ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত নয়াদিল্লির সঙ্গে কোনো বাণিজ্য শুরু হতে পারে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, কাশ্মীর ইস্যুতে ইসলামাবাদ যদি মৌলিক অবস্থান পরিবর্তন করে দিল্লির সঙ্গে বাণিজ্য করে তবে সেটা হবে কাশ্মীরের জনগণকে তাচ্ছিল্য করার মতো অপরাধ।
এর আগে, মন্ত্রিসভায় দেশটির অর্থনৈতিক সমন্বয় বিভাগ ভারত থেকে স্বল্পমূল্যে চিনি ও তুলা আমদানির প্রস্তাব উত্থাপন করে।
ভারত থেকে আমদানির পরিকল্পনা স্থগিত
ভারতের কাছ থেকে সীমিত পরিসরে চিনি, গম ও তুলা আমদানির পরিকল্পনা নেয়ার এক দিন না পেরোতেই বৃহস্পতিবার তা বাতিল করে পাকিস্তান।
বৃহস্পতিবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ভারত সরকার জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত আমদানি স্থগিত থাকবে।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর রাজ্যের সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার পর নয়াদিল্লির সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করে ইসলামাবাদ। এ নিয়ে তখন থেকেই প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনার পারদ চরমে ওঠে।
গত বুধবার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে অনুমোদনের সুপারিশ করে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমন্বয় কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিজ দেশেই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ইমরান খানের সরকার। কাশ্মীর ইস্যুতে সমঝোতা না হওয়া সত্ত্বেও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদরা।
শুরুতে পাকিস্তান ও দেশের জনগণের স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছিলেন দেশটির অর্থমন্ত্রী হামমাদ আজহার। তবে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মুখে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলে ইসলামাবাদ।
সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান চিঠি আদান-প্রদান করেন। একই সঙ্গে সিন্ধু নদের পানি বণ্টন নিয়ে গত সপ্তাহে আবারও আলোচনা শুরু করেছেন দেশ দুটির কর্মকর্তারা। ফলে দুদেশের সম্পর্কে বরফ গলছে বলে আশা করছিলেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে পাকিস্তানের অর্থনীতি আরও নিম্নমুখী বলে নতুন করে ক্ষোভ দানা বাঁধছে ইমরান খানের সরকারের বিরুদ্ধে। ‘থার্ড ওয়েভ’ এর ঝুঁকির মধ্যে বড় পরিসরে আংশিক লকডাউনের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পবিত্র রমজান মাসের আগে ভারত থেকে পাঁচ লাখ টন চিনি, তিন কোটি টন গম এবং তুলা ও সুতা সীমিত পরিসরে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসলামাবাদ।
অর্থনৈতিক সমন্বয় কমিটি জানিয়েছিল, ভারত থেকে চিনি আমদানি করলে পাকিস্তানে চিনির দাম অন্তত ২০ শতাংশ কমানো যাবে।