ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণের সময় বিজেপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখল ও ভোট চুরির অভিযোগ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বৃহস্পতিবার গভর্নর জগদীপ ধনকরকে ফোন করে নালিশও জানান তিনি।
এনডিটিভি জানিয়েছে, নন্দীগ্রামে নিজ বাড়ি থেকে ভোট পরিস্থিতির খবরাখবর নিচ্ছিলেন মমতা। দলীয় কর্মীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুপুরে হুইলচেয়ারে বসেই কেন্দ্রে যান তিনি।
একটি কেন্দ্রে দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। পরে কেন্দ্রের আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যরা তাকে উদ্ধার করেন।
প্রাণনাশের শঙ্কা জানিয়ে মমতা বলেন, ‘যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। আইনের শাসন পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।’
পরিস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেন তিনি।
এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে তথ্য চেয়ে ///পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
পশ্চিমবঙ্গে ২৯৪ আসনের বিধানসভার ৩০ আসনে দ্বিতীয় ধাপের ভোটে প্রার্থীর সংখ্যা ১৭১ জন। সহযোগী থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে মমতা একই আসন থেকে লড়ছেন বলে এ ধাপে ভোটযুদ্ধের কেন্দ্রে রূপ নেয় নন্দীগ্রাম আসন।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে প্রথমে বয়ালের একটি কেন্দ্রে যান মমতা। সেখানে পৌঁছে তিনি অভিযোগ করেন, তার দলের পোলিং এজেন্টদের বুথের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। তখনই হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিতে শুরু করেন বিজেপির কর্মীরা।
তৃণমূল ও বিজেপির কর্মীদের মধ্যে প্রায় দুই ঘণ্টা চলে এ উত্তেজনা। নিরাপত্তাহীনতার কারণে পুরো সময় বুথের একটি কক্ষে থাকতে হয় মমতাকে। এ সময় পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করতে দেখা যায় নিরাপত্তাকর্মীদের।
পরে ক্ষিপ্ত মমতা সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। তাদের কোনো দোষ নেই। তারাও আমাদের ভাইবোন। কিন্তু এখানে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছেন। কেন এমনটা হবে? নির্বাচন কমিশন কীভাবে এসব মেনে নেয়? স্লোগান দিয়ে, চিৎকার করে ভোটের পরিবেশ নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এ রকম নির্বাচন তো জীবনে দেখিনি।’
অন্য রাজ্য থেকে সন্ত্রাসীদের পশ্চিমবঙ্গে ঢুকিয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে বলে দাবি মমতার। তিনি জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকে ৬৩টি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দিয়েছেন তিনি। একটির ব্যাপারেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি নির্বাচন কমিশন।
মমতা বলেন, ‘যারা চিৎকার করেছে, স্লোগান দিয়ে ভোটারদের ভয় দেখিয়ে ভোটের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করেছে, তারা সবাই বহিরাগত। বিহার আর উত্তর প্রদেশ থেকে এসেছে তারা। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সুরক্ষা দিয়েছে।’
এর আগে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বিহার, উত্তর প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশসহ বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলো থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নির্বাচনি দায়িত্ব দিয়ে না পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের প্রভাব পড়তে পারে নির্বাচনে, এমন আশঙ্কা ছিল দলটির।
তৃণমূলের জ্যেষ্ঠ নেতা ডেরেক ও’ব্রায়ানও বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১২টি কেন্দ্র দখলের লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনকে। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ভোট কারচুপি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এর আগে তৃণমূল বিধায়ক মহুয়া মৈত্র টুইটারে অভিযোগ করেন, দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে ১৫০টির বেশি ইভিএমে নানা রকম ত্রুটি দেখা গেছে।
ইভিএমে ত্রুটির সত্যতা নিশ্চিত করে সমস্যা প্রায় সমাধানের দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন।