ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে রাজ্যের ৩০টি আসনে ভোট শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে শুরু হওয়া এ ভোটে সবার নজর নন্দীগ্রাম আসনে। সেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে লড়ছেন তার একসময়ের মিত্র থেকে শত্রু বনে যাওয়া বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী।
একই দিনে অসমের ৩৯টি আসনেও ভোট শুরু হয়েছে বলে এনডিটিভি ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনে শুরু থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল নন্দীগ্রাম আসনটি। এ আসনের প্রচারে ছিল সে উত্তাপ। প্রচারের শেষ দিন মঙ্গলবার শুভেন্দুকে বিশ্বাসঘাতক বলে মন্তব্য করেছিলেন মমতা। জবাবে শুভেন্দু মুখ্যমন্ত্রীকে ৫০ হাজার ভোটে হারানোর কথা বলেছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রামের আদি বাসিন্দা শুভেন্দু। ওই এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য তিনি।
২০০৭ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বামফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রশাসন বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নন্দীগ্রামে স্থানীয়দের উচ্ছেদের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করে। ওই সময় মমতার নির্দেশে শুভেন্দুর নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়।
ওই আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে ১৪ জন মানুষের মৃত্যু হয়। প্রতিবাদের মুখে একপর্যায়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় বামফ্রন্ট সরকার।
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পেছনে নন্দীগ্রাম আন্দোলন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। মমতার জয়ের মধ্য দিয়ে বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনামলের অবসান হয়।
মমতার ভাইয়ের ছেলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে গত বছরের ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু।
দল ছেড়ে শুভেন্দুর চলে যাওয়াকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখেন মমতা। তাই নিজ এলাকা ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর বিপক্ষে লড়াইয়ে নামেন তিনি। ওই আসনে মূলত হচ্ছে মমতা ও শুভেন্দুর মর্যাদার লড়াই।
নন্দীগ্রাম এলাকার প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। ভোটের ফল নির্ধারণে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ভারতজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে।
এ ধাপে পশ্চিম মেদিনীপুরের ৯টি, বাঁকুড়ার ৮টি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৪টি ও পূর্ব মেদিনীপুরের ৯টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে।
অন্যদিকে অসমে ১২৬টি আসনের মধ্যে ৩৯টিতে ভোট হচ্ছে। সেখানে প্রার্থীদের মধ্যে চার মন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকারও রয়েছেন।
২০১৬ সালের নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপি ২২টি আসনে জয়ী হয়। অসম গণপরিষদ ২টি, বোড়োল্যান্ড পিপলস ফ্রন্ট ৪ আসনে জয় পায়।
গত ২৭ মার্চে শুরু হওয়া বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপে পশ্চিমবঙ্গে ৮৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ ও অসমে ৭৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ মানুষ ভোট দেয়।
আগামী ২ মে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হবে।