ডনাল্ড ট্রাম্পের বিবেচনায় রিপাবলিকান পার্টির পরবর্তী প্রধান হিসেবে উপযুক্ত কারা, প্রশ্ন করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টের কাছে। উত্তরসূরি হিসেবে পছন্দ বলে তাৎক্ষণিকভাবে যে নামগুলো নিয়েছিলেন ট্রাম্প, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ফ্লোরিডার গভর্নর রোনাল্ড ডিওন ডি’সান্তিস, মিসৌরির সিনেটর জোস হাওলি ও টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ। তবে তালিকায় ছিল না সহযোগী ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের নাম।
বার্তা সংস্থা এপিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নাম লেখানোর দৌড়ে খুব একটা তাড়াহুড়া করছেন না পেন্স। ধীরস্থিরভাবে জনসমক্ষে আনছেন নিজেকে। বিভিন্ন রিপাবলিকান সংগঠনে যোগ দিচ্ছেন, পত্রপত্রিকায় উপসম্পাদকীয় লিখছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের যা যা অর্জন, সেগুলো আলোচনায় রাখতে একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপও চালু করতে যাচ্ছেন তিনি।
কিন্তু চলতি মাসের শুরুতে এক পোডকাস্ট সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের উত্তরসূরি হিসেবে পছন্দের তালিকা থেকে বাদ পড়ায় বেশ বেকায়দায় আছেন পেন্স।
ট্রাম্পের একনিষ্ঠ এই সমর্থকের ভূমিকা নিয়ে দ্বিধা তৈরি হয়েছে নিজ দলেই। প্রশ্ন উঠেছে, জানুয়ারিতে জো বাইডেনের সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের সাংবিধানিক দায়িত্ব পেন্স সঠিকভাবে পালন করেছিলেন কি না।
নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয় না মেনে ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে অধিবেশন চলাকালে নজিরবিহীন বিক্ষোভ উসকে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যেই তোপের মুখে পড়েছিলেন তিনি।
এ অবস্থায় রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেনশিয়াল প্রাইমারিতে জয়ী হতে একদিকে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি নিজের আনুগত্য প্রমাণ করতে হবে পেন্সকে। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের মেয়াদের শেষ দিকে কংগ্রেসে রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভ উসকে দেয়াসহ প্রেসিডেন্টের বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে নিজের ভূমিকাও যে সঠিক ছিল প্রমাণ করতে হবে তাকে।
পরস্পরবিরোধী দুটি বিষয়ের ভারসাম্য রক্ষা করে আদৌ তিনি নির্বাচনী দৌড়ে নাম লেখাতে পারবেন কি না, তাই নিয়ে এখন জল্পনা চলছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে।
২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রথমে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো টেড ক্রুজকে অনুমোদন দিয়েছিলেন পেন্স। দলটির কৌশলবিদ অ্যালিস স্টুয়ার্ট বলেন, ‘টেড ক্রুজের পক্ষ নেয়া ব্যক্তিকে প্রধান সহযোগী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ট্রাম্প। কাজেই পেন্স নিঃসন্দেহে উড়িয়ে দেয়ার মতো লোক নন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জট ছাড়ানোর সূক্ষ্ম কৌশলগুলো ভালোভাবেই রপ্ত করেছেন তিনি।’
অবশ্য ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে পেন্স লড়বেনই, সে নিশ্চয়তা তিনি বা তার সহযোগীরা এখনও দেননি। বরং আপাতত পরিবারকে সময় দেয়া এবং আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনকে গুরুত্ব দেয়ার কথাই বারবার বলছেন তারা। ২০২০-এর নির্বাচনে হারানো অন্তত একটি কংগ্রেস আসন পুনরুদ্ধার করতে চায় রিপাবলিকান পার্টি।
তাই ২০২৪-এর নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে এখন নীরব থাকলেও সঠিক সময়েই পেন্স এ নিয়ে সরব হবেন বলে মনে করেন রিপাবলিকান পার্টির অনেক নেতা।
রিপাবলিকান স্টাডি কমিটির প্রধান এবং এরই মধ্যে পরবর্তী প্রেসিডেন্টপ্রার্থী হিসেবে পেন্সের পক্ষে থাকা আইনপ্রণেতা জিম ব্যাংকস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন তো এখনও অনেক দূরের কথা। মাইক পেন্স যদি তাতে অংশ নেন, তাহলে নিজের অবস্থান শক্ত করেই দলের মনোনয়ন চাইবেন। যদি তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে ফেরেন এবং যখন ফিরবেন, সারা দেশের রিপাবলিকান নেতা ও সমর্থকদের মধ্যে সাড়া ফেলতে পারার মতো করেই ফিরবেন।’
তবে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পেন্স। অন্যদিকে ট্রাম্পের উপদেষ্টা জেসন মাইলার বলেন, ‘ট্রাম্প সুনির্দিষ্টভাবে কোনো নাম নেননি। কাজেই তিনি যা বলেছেন এবং বলেননি, এর মাঝের ফাঁকফোকর বিশ্লেষণের সময় এখনও আসেনি।’
বিগত নির্বাচনের ফল উল্টে দেয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতা থাকলেও পেন্স তা প্রয়োগ করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে ট্রাম্পের।
পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, তাও নিশ্চিত করেননি ট্রাম্প। যদি নির্বাচনি দৌড়ে নাম নাও লেখান, পেন্সকে জায়গা ছাড়তে রাজি নন ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যান্য অনেক কর্মকর্তা। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পেন্স এরই মধ্যে আইওয়া ও নিউ হ্যাম্পশায়ারসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোতে এ নিয়ে তৎপরতা শুরু করেছেন। এ রকমই একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য সাউথ ক্যারোলাইনায় আগামী মাসে উন্মুক্ত ভাষণ দেবেন পেন্স। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এটি হবে তার প্রথম ভাষণ।
অ্যালিস স্টুয়ার্ট বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে ট্রাম্পের শাসনামলে রিপাবলিকান পার্টির ওপর আস্থা হারানো প্রান্তিক ভোটারদের পক্ষে ফেরাতে এবং একই সঙ্গে দলের ভেতরেও নিজের অবস্থান শক্ত করতে চান পেন্স। এ লক্ষ্য অর্জনে যা যা করা দরকার, সেগুলোই করছেন তিনি।’
২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন সামনে রেখে আগামী দুই বছর পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিতে দলকে সহযোগিতা করবেন পেন্স, জানিয়েছেন তার সহযোগীরা।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাফল্য তুলে ধরার মাধ্যমে কট্টর ট্রাম্প সমর্থকদের পেন্স পাশে টানতে চান বলেও মত অনেকের।