শোভন-বৈশাখী। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে এই নাম দুটি এখন ব্যাপক আলোচিত।
শোভন মানে শোভন চট্টোপাধ্যায়। কলকাতার সাবেক মেয়র। রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী। তৃণমূলের সাবেক নেতা। এখন বিজেপিরও সাবেক।
৫৬ বছর বয়সী এই নেতা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আগে কলকাতার কাউন্সিলর ছিলেন, সেখান থেকে ২০১০ সালে মেয়র হন তিনি। মমতার কল্যাণে বিধায়ক হন দুই বার। একাধিক দপ্তরের মন্ত্রীও হয়েছিলেন।
অপরদিকে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩৮ বছরের কলেজ শিক্ষিকা। শোভনের হাত ধরে তৃণমূলের রাজনীতিতে পা রাখেন বৈশাখী।
২০১৮ সালে দুই নেতা একসঙ্গেই দল ছেড়ে বিজেপিতে যান। পরে বিজেপি ছেড়ে এক সঙ্গেই রাজনীতিতে বিরতি নেন।
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগে রাজনীতির চেয়ে এখন ব্যক্তিজীবন নিয়েই আলোচনায় তারা।
Caption
বৈশাখীর স্বামী অধ্যাপক মনোজিত বিশ্বাস। শোভনের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়। তাদের বাদ দিয়ে শোভন-বৈশাখীর সম্পর্ক আলোচনায় উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত তাদের ছবির কল্যাণে। এসব ছবি পোস্ট করেন তারা নিজেরাই।
এমন পরিস্থিতিতে বৈশাখীর স্বামী নীরব থাকলেও উল্টো চিত্র শোভনের স্ত্রীর ক্ষেত্রে। রত্না প্রকাশ্যেই বৈশাখীর বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন। মমতার ছায়ায় বিধানসভা নির্বাচনে লড়ছেন তিনি। ভোটের প্রচারেও তার লক্ষ্য শোভন-বৈশাখী।
শোভন-বৈশাখীর বন্ধুত্ব প্রকাশ্যে আসে ২০১৮ সালে। তখন শোভন জেড-প্লাস সিকিওরিটি পাওয়া কলকাতার মেয়র। রাজ্যের মন্ত্রী। বৈশাখী আসতেই প্রথমে কোপ পড়ে তাঁর জেড প্লাস নিরাপত্তায়।
তাতেও পরোয়া নেই। বৈশাখী সেই বছরের ১১ মার্চ বলেছিলেন, মেয়র তার পারিবারিক বন্ধু। তিনি খুব ভালো সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন না। উনি যাতে মানসিকভাবে ফিট থাকেন এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি না হয়, বন্ধু হিসেবে তিনি তার খেয়াল রাখবেন।
একই সঙ্গে তিনি বলেন, এর জন্য পরবর্তী সময়ে যদি কোনো শাস্তি পেতে হয়, তাহলে তা তিনি (বৈশাখী) মাথা পেতে নেবেন। শাস্তি না হোক মূল্য তো দিতেই হয়েছে। দলবদলেও লাভ হয়নি। তবুও বন্ধুত্ব!
২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেন শোভন। পরের বছর ১৪ আগস্ট বৈশাখীকে সঙ্গে নিয়েই যোগ দেন বিজেপিতে। অনেক টালবাহানার পর সক্রিয়ও হয়েছিলেন দুজনই।
কিন্তু সম্প্রতি বিজেপির প্রার্থী তালিকায় বেহালা পূর্ব আসনে শোভনের নাম নেই। বৈশাখীর নামও নেই কোনো তালিকায়।
এ অবস্থায় ১৪ মার্চ বিজেপি ছাড়েন শোভন-বৈশাখী। এখনও দলবদলের খবর নেই।
তারা একসঙ্গেই থাকেন। সামাজিক গণমাধ্যমে বৈশাখী সম্প্রতি লিখেছেন, ‘তুমি সবসময় আমার আইকন হয়ে থাকবে। আজকের অপমান আমাদের উদ্দীপনা, আমাদের উদ্দীপনা ধ্বংস করতে পারে না! আমরা লড়াই করব এবং জিতব।’
এখানেই শেষ নয়। বৈশাখীর আরও উপলব্ধি, ‘ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা বেশি দিন থাকবে না। বেহালা প্রাচ্যের মানুষ তোমাকে ভালোবাসে এবং এটাই তোমার সবচেয়ে বড় শক্তি।’
বেহালা পূর্বে শোভনের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তাই বিজেপি সেখানে তাকে দিতে নারাজ। আর এতেই ক্ষুব্ধ শোভন-বৈশাখী।
বিজেপি অবশ্য তাদের দলবদলকে তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘ দল যাকে যা নির্দেশ দিয়েছেন, সেই মতো কাজ করতে হবে। কেউ তা না করতে পারলে, তারা নিজেদের মতো ভাববেন।’