সাংবাদিক জামাল খাশোগজি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত বন্ধ করতে জাতিসংঘ কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি আরব।
বৃহস্পতিবার টুইটারে এ বিষয়ক ব্যাখ্যা দেন সৌদি আরবের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান আওয়াদ আল আওয়াদ।
তিনি লিখেছেন, ‘প্রায় এক বছর আগে অ্যাগনেস ক্যালামার্ডকে আমি হত্যার হুমকি দিয়েছিলাম বলে জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের মনে একটি ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন।’
এর আগে বুধবার অ্যাগনেস ক্যালামার্ডকে সৌদি সরকারের অন্যতম শীর্ষ এই কর্মকর্তা সত্যিই হুমকি দিয়েছিলেন বলে নিশ্চিত করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র রুপার্ট কোলভিল।
গত মঙ্গলবার ক্যালামার্ডের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, খাশোগজি হত্যায় জড়িতদের নিয়ে তদন্ত বন্ধ না করলে ‘দেখে নেয়ার’ হুমকি দিয়েছিলেন সৌদি আরবের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান আওয়াদ আল আওয়াদ।
বুধবার ই-মেইলের মাধ্যমে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন রুপার্ট কোলভিল।
২০১৮ সালের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন জামাল খাশোগজি। পরে বেরিয়ে আসে কনস্যুলেটের ভেতরে নির্মমভাবে তাকে হত্যার ঘটনা।
বিষয়টি নিয়ে তখন থেকেই ক্যালামার্ডের নেতৃত্বে স্বতন্ত্র অনুসন্ধান শুরু করে জাতিসংঘ।
ক্যালামার্ড জানান, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে জেনেভায় জাতিসংঘে সৌদি সরকারের প্রতিনিধিদের একটি বৈঠক হয়। সেখানেই খাশোগজি হত্যা তদন্ত বন্ধের জন্য তাকে হুমকি দিয়ে বার্তা পাঠান আওয়াদ। যা পরে জাতিসংঘেরই এক সহকর্মীর কাছ থেকে জানতে পারেন তিনি।
কোলভিল বলেন, ক্যালামার্ডের পাশাপাশি জাতিসংঘের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়োজিত কর্তৃপক্ষকেও হুমকির বিষয়টি জানানো হয়েছিল তখন।
এ প্রসঙ্গে সৌদি মানবাধিকার প্রধান আওয়াদ বলেন, ‘আমাদের মধ্যে ঠিক কী আলোচনা হয়েছিল এক বছর আগে, তা এখন স্পষ্টভাবে আমার মনে নেই। কিন্তু জাতিসংঘের কোনো কর্মকর্তা বা কাউকেই এ ধরনের কোনো হুমকি আমি কোনোদিনই দিইনি। আমার বক্তব্যকে কেউ হুমকি হিসেবে নিয়েছেন জেনে আমি সত্যিই দুঃখিত।’
আলজাজিরা জানিয়েছে, এ ব্যাপারে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি ক্যালামার্ড।
২০১৯ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে খাশোগজি হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এ ঘটনায় উঠে এসেছিল বেশ কয়েকজন সৌদি কর্মকর্তার নাম।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর সম্পদ জব্দ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার চলাচল সীমিত করতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাসহ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছিলেন ক্যালামার্ড।
এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় শীর্ষ এক সৌদি কর্মকর্তা ব্যক্তিগত আলোচনায় ক্যালামার্ডকে ‘দেখে নেয়া দরকার’ বলে মন্তব্য করেছিলেন বলে জানা যায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে।
এ প্রসঙ্গে ক্যালামার্ড বলেন, ‘আমার মতে এটাকে হত্যার হুমকিই বলে।’
সালমান প্রশাসনের কট্টর সমালোচক হিসেবে যুবরাজের নির্দেশেই খাশোগজিকে হত্যা করা হয় বলে নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাও।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।