সাংবাদিক জামাল খাশোগজি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর জাতিসংঘের স্বতন্ত্র তদন্ত কর্মকর্তা আনিয়েস ক্যালামার্দকে মৃত্যুর হুমকি দেন সৌদি আরবের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্যালামার্দ এমন অভিযোগ করেন।
বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডবিষয়ক জাতিসংঘের বিদায়ী বিশেষ রেপোর্টার ক্যালামার্দ। তিনি বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে জাতিসংঘের এক সহকর্মী তাকে সতর্ক করে বলেছিলেন, জেনেভায় সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌদি আরবের কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। সেখানে জ্যেষ্ঠ ওই কর্মকর্তা ক্যালামার্দকে দুইবার হুমকির কথা জানান। তিনি (সৌদির কর্মকর্তা) বলেছিলেন, জাতিসংঘ ক্যালামার্দকে নিয়ন্ত্রণ না করলে তারাই ব্যবস্থা নেবেন।
বৈঠকে উপস্থিত ওই সহকর্মী সৌদি কর্মকর্তার হুমকিকে কীভাবে নিয়েছিলেন জানতে চাইলে ক্যালামার্দ বলেন, ‘ওটা মৃত্যুর হুমকি ছিল। তিনি আমাকে তা-ই জানিয়েছেন।’
চলতি মাসে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব পদে যোগ দিতে যাচ্ছেন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সের নাগরিক ক্যালামার্দ।
২০১৮ সালের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের সৌদি কনস্যুলেটে খুন হন দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট ও সৌদি সরকারের নীতির কট্টর সমালোচক খাশোগজি।
জাতিসংঘের হয়ে ক্যালামার্দই প্রথম ওই হত্যাকাণ্ডের প্রকাশ্য তদন্ত শুরু করেন। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের জুনে ১০০ পৃষ্ঠার বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) ও দেশটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জামাল খাশোগজি হত্যায় দায়ী। এর ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ রয়েছে।
ওই হত্যাকাণ্ডকে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ’ হিসেবেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন ক্যালামার্দ।
গত মাসের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন সরকার খাশোগজি হত্যার অপ্রকাশিত প্রতিবেদন জনসমক্ষে নিয়ে আসে। এতে বলা হয়, গোয়েন্দাদের কাছে থাকা তথ্যে দৃশ্যত মনে হচ্ছে, খাশোগজি হত্যাকাণ্ডে অনুমোদন আছে এমবিএসের।
তবে ভবিষ্যৎ বাদশাহ এমবিএস খাশোগজি হত্যায় জড়িত ছিলেন—বাইডেন প্রশাসনের এমন প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে সৌদি সরকার।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। ছবি: এএফপি
কী হয়েছিল বৈঠকে
সহকর্মীর বরাত দিয়ে ক্যালামার্দ বলেন, ‘গত বছরের জানুয়ারিতে জেনেভাভিত্তিক সৌদি কূটনীতিকদের সঙ্গে শহরটিতে সফররত সৌদি কর্মকর্তা ও জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকের একপর্যায়ে খাশোগজি হত্যা নিয়ে আমার তদন্ত প্রতিবেদনের সমালোচনা করেন সৌদি কর্মকর্তারা। প্রতিবেদনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশও করেন। কাতারে থেকে টাকা খেয়ে ওই প্রতিবেদন করা হয়েছে বলে আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগও আনেন তারা।’
‘এরপর সফররত সৌদি আরবের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, কয়েকজন ব্যক্তি ক্যালামার্দকে শিক্ষা দিতে প্রস্তুত। বিষয়টি ওইসব ব্যক্তি তাকে ফোন করে জানিয়েছেন।’
বৈঠক নিয়ে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ক্যালামার্দ আরও বলেন, ‘ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বক্তব্যে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা উদ্বেগ জানালে সৌদির অন্য কর্মকর্তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে না নিতে বলেন।
‘এরপর সৌদি আরবের কূটনীতিকরা ঘর থেকে বের হয়ে যান। কিন্তু সফররত ওই কর্মকর্তা ঘরে থাকা জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের আমাকে নিয়ে ফের হুমকির কথা বলেন।’