ইসরায়েলে দুই বছরের মধ্যে অনুষ্ঠিত চতুর্থ নির্বাচনেও সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় আসন না পাওয়ার শঙ্কায় আছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ভোট পরবর্তী জরিপগুলো এমন আভাস দিয়েছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
নির্বাচনে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের ১২০ আসনের মধ্যে জোটসঙ্গীদের নিয়ে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি পেতে পারে ৫২ থেকে ৫৩টি। অন্যদিকে বিরোধীরা ৬০টিতে জয়ী হতে পারে।
এর মানে দাঁড়াচ্ছে, জাতীয়তাবাদী দল ইয়ামিনা পার্টির সমর্থন পেলেও সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছেন না নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশ্বস্ত সহকর্মী নাফতালি বেনেটের নেতৃত্বাধীন ইয়ামিনা মঙ্গলবারের নির্বাচনে সাতটি আসনে জয়ী হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। তবে দলটি কাকে সমর্থন দেবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।
বুথফেরত জরিপের পর এক বিবৃতিতে বেনেট বলেন, ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্য যা কল্যাণকর, আমি তাই করব।’
বিবৃতিতে ইয়ামিনাপ্রধান আরও বলেন, নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার আলাপ হয়েছে। তিনি নেতানিয়াহুকে বলেছেন, নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল দেখে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কড়াকড়ির কারণে স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলের আগে সব ভোট গণনার আশা করছে না ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি।
সমর্থকদের ধন্যবাদ নেতানিয়াহুর
ফল নিয়ে জরিপের মধ্যে সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার রাতে এক টুইটে সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা ডানপন্থি ও আমার নেতৃত্বাধীন লিকুদ পার্টিকে বড় জয় এনে দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত লিকুদই সবচেয়ে বড় দল।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে, অধিকাংশ ইসরায়েলিই ডানপন্থি এবং তারা শক্তিশালী, স্থিতিশীল ডানপন্থি সরকার চান।’
মধ্যপন্থিদের ‘বড়’ জয়
নির্বাচনে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার ল্যাপিডের নেতৃত্বাধীন মধ্যপন্থি দল ইয়েশ আতিদ ১৬ থেকে ১৮টি আসন পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফলের পূর্বাভাস নিয়ে ল্যাপিড বলেন, দলের ‘ব্যাপক’ অর্জনে তিনি গর্বিত।
বিরোধীদলীয় এ নেতা বলেন, ‘পরিবর্তনের জন্য আমি এ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা থেকে জোটের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি এবং আগামী কয়েক দিন তা চালু রাখব।’
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলে বোধসম্পন্ন একটি সরকার প্রতিষ্ঠায় সম্ভাব্য সবকিছুই করবেন।
নেতৃত্বের পরীক্ষা
ইসরায়েলের এ নির্বাচনকে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বের ওপর গণভোট হিসেবে দেখা হচ্ছে। এতে ভোট দিয়েছে ৬৭ শতাংশের বেশি ভোটার।
২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় আছেন ৭১ বছর বয়সী নেতানিয়াহু। এর আগে নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে তিন বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
এ নির্বাচনে নেতানিয়াহুর প্রচারের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল করোনার টিকাদানে কর্মসূচিতে বিশ্বে ইসরায়েলের নেতৃত্ব ও আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে তার কূটনৈতিক সাফল্য।
বিরোধী দলগুলোর নেতাদের ভাষ্য, দুর্নীতির অভিযোগে বিচার চলায় পদে থাকা উচিত নয় নেতানিয়াহুর। তবে দুর্নীতির অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন তিনি।
এর আগের তিনটি নির্বাচনে নেতানিয়াহু কিংবা তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের কেউই স্থিতিশীল সরকার গঠনে কোনো জোট গঠন করতে পারেনি।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেসের (আইডিএফ) সাবেক চিফ অফ জেনারেল স্টাফ বেনি গানৎজের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তি করে
জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করেছিলেন নেতানিয়াহু। তবে গঠনের মাত্র সাত মাস পর গত বছরের ডিসেম্বরে ভেঙে পড়ে সে সরকার।
এবারের নির্বাচনে গানৎজের দল ‘ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট’ সাতটি আসন পেতে পারে। তবে সে আসনগুলো নিয়ে নেতানিয়াহুর জোটে যাচ্ছেন না বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন সাবেক জেনারেল।
তিনি মঙ্গলবার বলেন, পরিবর্তনের পক্ষের জোটকে ঐক্যবদ্ধ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী গানৎজের এ অবস্থানে বোঝা যাচ্ছে, সরকার গঠন নিয়ে সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা কম। অর্থাৎ, পঞ্চমবারের মতো নির্বাচন হতে পারে ইসরায়েলে।