বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভারত-পাকিস্তানে শান্তি ফেরানোর পেছনে আমিরাত

  •    
  • ২২ মার্চ, ২০২১ ১৫:২৫

মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক প্রভাব ঢের বেড়েছে আরব আমিরাতের। এই অঞ্চলে সহিংসতা, বিবদমান গ্রুপগুলো ও আঞ্চলিক নেতাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তাদের। ব্যবসা-বাণিজ্য ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক বলয় বাড়াতে এশিয়ার দেশগুলোতেও মনোযোগ বাড়িয়েছে আরব আমিরাত।

হঠাৎ করেই চমকে দেয়ার মতো খবর দেয় ভারত-পাকিস্তান। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশ দুটির সেনাবাহিনীর প্রধান পর্যায় থেকে বিরল প্রতিশ্রুতি আসে যে, ২০০৩ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি এখন থেকে মেনে চলবে তারা।

এর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরই হঠাৎ এক দিনের সফরে দিল্লিতে উড়াল দেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের শীর্ষ পর্যায়ের এক কূটনীতিক। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশের মধ্যস্থতাতেই চির বৈরী ভারত-পাকিস্তান আবার শান্তির পথে বলে ব্লুমবার্গের বিশ্লেষণের বরাতে খবর প্রকাশ করেছে আল জাজিরা

২৬ ফেব্রুয়ারি আরব আমিরাতের শীর্ষ পর্যায়ের ওই কর্মকর্তা কিছু ইঙ্গিত দিয়ে জানান, তার দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ বিন জায়েদের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের আলোচনা হয়েছে। তারা ‘সব ধরনের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং এসব বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতির আলোচনাটা কয়েক মাস আগেই হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে গোপন এই আলোচনা খুব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

একজন কর্মকর্তা জানান, যুদ্ধবিরতি মেনে চলার ঘোষণা পারমাণবিক শক্তিধর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদে শান্তি ফেরানোর রোডম্যাপের কেবল শুরু। এর পরের ধাপও চলমান আছে। পরের ধাপে উভয় দেশ নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদে পুনরায় রাষ্ট্রদূত মোতায়েনের চেষ্টা করা হবে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের ৭০ বছরের স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা কেড়ে নেয়ার পর দেশটির সঙ্গে নতুন করে সহিংসতায় জড়ায় পাকিস্তান। একপর্যায়ে নয়াদিল্লি থেকে কূটনীতিক প্রত্যাহার করে নেয় ইমরান খান সরকার। একই পদক্ষেপ নেয় নরেন্দ্র মোদির সরকারও।

আরব আমিরাতের কর্মকর্তা জানান, দুই দেশে একে অপরের কূটনীতিক বহালের পর অন্যান্য বিষয়েও আলোচনা হবে। ওই ধাপে থাকবে তাদের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিতর্কিত কাশ্মীর ইস্যুর সমাধান।

১৯৪৭ সালে ব্রিটেন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর কাশ্মীর ইস্যুতে অনেকবার বিবাদে জড়িয়েছে ভারত-পাকিস্তান। যুদ্ধ হয়েছে তিনবার।

বিগত বছরগুলোতে কাশ্মীর ইস্যুর সমাধানে দেশ দুটির শান্তি আলোচনা নিয়ে কিছু প্রচেষ্টা দেখা গেলেও সেসব বাস্তব মুখ দেখেনি একবারও। বরং উভয় দেশকে নির্বাচনের সময় কাশ্মীর বিষয়টিকে ব্যবহার করতে দেখা যায়।

গত নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি

কর্মকর্তারা বলছেন, দেশ দুটির মধ্যে আবার শান্তি ফেরানো নিয়ে প্রত্যাশাটা আপাতত কমই। তাদের মধ্যে কঠিন বরফ গলাতে পারলে অর্জনের পাল্লাটা আরও ভারি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ফের কূটনীতিক বহালের পাশাপাশি পাঞ্জাব সীমান্ত দিয়ে দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্য আবার শুরু হতে পারে।

ভারত-পাকিস্তানে শান্তি ফেরানোর প্রক্রিয়াটা গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এখানে জড়িত অনেকগুলো দেশের স্বার্থ।

জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানে শান্তি ফেরানোর আলোচনা আরও বিস্তৃত করেছে। এতে এবার পাকিস্তানকেও জড়াতে চাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। যদিও আগে থেকেই আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি পাকিস্তানেরও এক ধরনের প্রভাব ছিল।

আর পাকিস্তানের সঙ্গে বিরোধ কমিয়ে আনতে চাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। এর পরিবর্তে মনোযোগ দিতে চাচ্ছেন চীন সীমান্তে। দেশটির সঙ্গে সাম্প্রতিক বিরোধের জেড়ে সেখানে সেনা উপস্থিতি বাড়ানোর লক্ষ্য নয়াদিল্লির।

আর পাকিস্তান সাম্প্রতিক সময়ে চরম অর্থনৈতিক দুর্দশায় পড়ায় দেশটির নেতাদের নজর এখন এ সঙ্কট কাটিয়ে ওঠায়। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য শক্তিধর দেশের সঙ্গে ফের ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে মরিয়া তারা।

ভারত-পাকিস্তানের হয়ে এ কাজে দুতিয়ালির কাজ করে যাচ্ছে আরব আমিরাত। যদিও বিষয়টি নিয়ে ইসলামাবাদ বা নয়াদিল্লি থেকে কেউ কোনো মন্তব্য করতে চায়নি।

গত সপ্তাহে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘অতীত ভুলে যেতে হবে এবং এগিয়ে যেতে হবে।’ তিনি আরও জানান, ‘বিবাদমান সকল বিষয়’ সমাধানে প্রস্তুত আছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব নিরসনে নেপথ্যে কাজ করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত

ভারত থেকেও পাকিস্তানের ব্যাপারে কিছুটা শৈথিল্য দেখানো হচ্ছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তার আরোগ্য কামনা করে বৈশ্বিক নেতাদের মধ্যে সবার আগে টুইট করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য ও কূটনীতিক সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে আরব আমিরাতের। এছাড়া, সম্প্রতি দেশটির কার্যত শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের হাত ধরে বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাবও বেড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তাদের।

মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক সময়ে প্রভাব ঢের বেড়েছে আরব আমিরাতের। এই অঞ্চলে সহিংসতা, বিবাদমান গ্রুপগুলো ও আঞ্চলিক নেতাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তাদের। ব্যবসাবাণিজ্য ও আনুষাঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক বলয় বাড়াতে এশিয়ার দেশগুলোতেও মনোযোগ বাড়িয়েছে আরব আমিরাত।

দুই বছর আগে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৪০ জন ভারতীয় সেনাকে হত্যার পর পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে পৌঁছায়। জবাবে পাকিস্তান সীমান্তে ঢুকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ ওপর হামলা চালাতে ভারতীয় বাহিনীকে নির্দেশ দেয় মোদি সরকার। এসবের জেরে সব ধরনের কূটনীতিক সম্পর্ক স্থগিত করে দেয় দেশ দুটি।

গত মাসে ভারত পাকিস্তান যৌথ বিবৃতিতে জানায়, বিবাদের ‘মূল ইস্যুগুলো শনাক্তে সম্মত হয়েছে’ তারা। সেই সঙ্গে কাশ্মীর ও সন্ত্রাস নিয়ে বিস্তৃত আলোচনারও ইঙ্গিত দেয়া হয় দেশ দুটি থেকে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে করে আসেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর

এতে আরব আমিরাতের যে জোরালো ভূমিকা রয়েছে গত কয়েক মাসে এমন কয়েকটি নমুনা রেখেছে দেশটি। গত নভেম্বরে দুই দিনের সফরে আবু ধাবিতে যান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এই সফরে বিন জায়েদ ও ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।

ওই মাসেই আরব আমিরাত সফরে যান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি, আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ফোন করেন। এ সময় তারা, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলো আলোচনা করেন।

এর কয়েক দিন আগে শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার সময় ইমরান খানকে বহনকারী বিমানকে ভারতের আকাশপথ ব্যবহার করার জন্য অনুমতি দেয় ভারত সরকার। ২০১৯ সাল থেকেই ভারতের আকাশে পাকিস্তানের বিমান চলা নিষিদ্ধ ছিল।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতির ঘোষণায় যে কয়েকটি দেশ স্বাগত জানিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম আরব আমিরাত। এক বিবৃতিতে দেশটি জানায়, দুটি দেশের সঙ্গেই তাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। শান্তি ফেরানোর ব্যাপারে ভারত-পাকিস্তানের মতৈক্যে উচ্ছ্বসিত আরব আমিরাত।

এ বিভাগের আরো খবর