অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে ইরান নতিস্বীকার করবে না বলে ফের জানিয়েছেন দেশটির ধর্মীয় সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
পারস্যের নববর্ষ নওরোজ উপলক্ষে স্থানীয় সময় রোববার টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ঘণ্টার ভাষণে তিনি এ বার্তা দেন বলে আল জাজিরা জানিয়েছে।
খামেনি বলেন, ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ‘সর্বোচ্চ চাপের’ প্রচারাভিযান বড় ধরনের অপরাধ ছিল। মূর্খের (ট্রাম্প) সেই অভিযান ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প সর্বোচ্চ চাপপ্রয়োগের ওই জঘন্য পথে হেঁটেছিলেন যা তার দেশের জন্য অমর্যাদা বয়ে এনেছিল। তাদের বোঝা উচিত ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপপ্রয়োগের নীতি এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট পূর্বসূরির পদাঙ্ক অনুসরণ করলে তা-ও ব্যর্থ হবে।’
পরমাণু সমৃদ্ধকরণ সীমিত করার বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে ২০১৫ সালে বিশ্ব শক্তিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে ইরান।
২০১৫ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় দেশটির সঙ্গে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তিটি ‘ইরান পারমাণবিক চুক্তি’ হিসেবে পরিচিত।
২০১৮ সালের ৮ মে একতরফাভাবে ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন ট্রাম্প। এরপর থেকে ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ’ নীতির অংশ হিসেবে ইরানের ওপর একের পর এক অবরোধ আরোপ করতে থাকেন তিনি।
পরের বছর জেসিপিওএর মূল শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানায় ইরান। এর অংশ হিসেবে পরমাণু সমৃদ্ধকরণ বাড়াতে থাকে দেশটি।
চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন জানায়, ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আগে দেশটিকে অবশ্যই পরমাণু চুক্তি মেনে কাজ করতে হবে।
অন্যদিকে ইরানের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রকে আগে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। এরপর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণসহ অন্য সব কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া থেকে পেছাবে দেশটি।
খামেনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, জার্মানির কথা শুনে জেসিপিওএ চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মত হয়েছিল ইরান। চুক্তিতে উল্লেখিত সব অঙ্গীকার মেনেও চলে ইরান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কেবল কাগজকলমেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে; বাস্তবে নয়।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে ইরানের এখন কোনো তাড়া নেই। স্থানীয় উৎপাদন বাড়িয়ে স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে ইরান।