বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাংলাদেশই বড় ইস্যু অসমের ভোটে

  •    
  • ১৯ মার্চ, ২০২১ ১৭:০৬

ভারতের স্বাধীনতার পর থেকেই অসম রাজ্যে অনুপ্রবেশ বড় ইস্যু। আধিপত্যবাদী অসমীয়ারা বাঙালিদের মেনে নিতে পারেন না। তাই বারবার অসম ‘বঙাল খেদা’ আন্দোলনে রক্তাক্ত হয়েছে।

ভারতের অসম রাজ্যের নির্বাচনে এবারও বাংলাদেশই প্রধান ইস্যু। বারবার প্রচারে উঠে আসছে অনুপ্রবেশের কথা। রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের আগে একাধিক আঞ্চলিক দল তৈরিও হয়েছে অনুপ্রবেশ সমস্যাকে কেন্দ্র করে।

ভারতের স্বাধীনতার পর থেকেই অসম রাজ্যে অনুপ্রবেশ বড় ইস্যু। আধিপত্যবাদী অসমীয়ারা বাঙালিদের মেনে নিতে পারেন না। তাই বারবার অসম ‘বঙাল খেদা’ আন্দোলনে রক্তাক্ত হয়েছে।

অথচ, অসমীয়াদের মতোই বাঙালিরাও অনেকেই এই রাজ্যেরই ভূমিপুত্র। কিন্তু তবু মানতে নারাজ বৃহত্তর অসমীয়া সমাজ। তাই ১৯৫১ সালে ভারতের মধ্যে একমাত্র অসমেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জী বা এনআরসির সূত্রপাত।

সেই এনআরসিই ফের হলো অসমে। তাতেও মেটেনি সমস্যা। জিইয়ে রয়েছে অনুপ্রবেশ সমস্যার কথা। জাতি-মাটি-ভিটা রক্ষার কথা বলে এখানে আঞ্চলিক দলের উত্থান বহুদিন ধরে। জাতীয় দলগুলো সেই আঞ্চলিক দলকেই মান্যতা দিতে বাধ্য হয়।

আশির দশকে ‘বঙাল খেদা’ বা বিদেশি খেদা আন্দোলনের জেরে অশান্তি মাত্রা ছাড়ায়। বাধ্য হয়ে রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত সরকার অসম চুক্তি করে। রাজ্যে ক্ষমতায় আসে আঞ্চলিক দল অসম গণপরিষদ বা অগপ।

কিন্তু তারা ক্ষমতায় এসেও সমস্যা মেটেনি। কিছু বাঙালি গ্রেপ্তার হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বিদেশি ভূত থেকে গেছে। ভোট এলেই সেই ভূত মাথাচাড়া দেয়। এবারও দিচ্ছে। এরই মধ্যে অগপ ছাড়াও এজেপি ও রাইজর দল নামে দুটি নতুন আঞ্চলিক দল ভোটে নেমেছে।

কংগ্রেস ও বিজেপির মতো দলগুলোও ভোটে জেতার স্বার্থে আঞ্চলিক দলের কাঁধে ভর করতে কুণ্ঠিত নয়। তাই অনুপ্রবেশের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুকে তারা হাতিয়ার করার চেষ্টা করছে নিজেদের স্বার্থে।

অসমে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ রুখতে একাধিক মেকানিজম কাজ করছে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। রয়েছে বিএসএফ জওয়ানদের কড়া পাহারা। এ ছাড়া বর্ডার পুলিশ রয়েছে অসম সরকারের।

প্রতিবার ভোটের আগে অনুপ্রবেশ নিয়ে চিৎকার, ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হলেও সমস্যাটির স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করেনি কেউ। ধামাচাপা দিয়ে জিইয়ে রাখা হয়েছে বিষয়টি।

রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ও তার অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও ‘বঙাল খেদা’ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। আঞ্চলিক দল হয়ে এখন বিজেপিতে।

অসমে ভোটারদের মধ্যে ৩৫ শতাংশেরও বেশি মুসলিম রয়েছেন। বাঙালির সংখ্যাও প্রায় তাই। ২৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। ১২৬টির মধ্যে ১৫টি কেন্দ্র বাঙালি অধ্যুষিত। তারপরও চলে ‘বঙাল খেদা’!

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর অসমে সমস্যার অন্ত নেই। প্রতি বছরই তিনবার বন্যা এখানকার ভবিতব্য। বেকার সমস্যা বাড়ছে। দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। তবু বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকেই ভোটে হাতিয়ার করে সব পক্ষ।

১২৬ কেন্দ্রের অসম বিধানসভায় মূল লড়াই এবার কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন মহাজোট বনাম ক্ষমতাসীন বিজেপির মিত্রজোট। উভয় শিবিরেই রয়েছে একাধিক আঞ্চলিক দল।

কংগ্রেসের জোটে শামিল মুসলিম দল বলে পরিচিত এআইইউডিএফ এবং বামদলগুলো। এ ছাড়া আঞ্চলিক গণমোর্চা, বড়ল্যান্ড পিপলস ফ্রন্ট-এর মতো দলগুলোও রয়েছে মহাজোটে।

মহাজোট নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএর বিরোধী হাওয়াকে কাজে লাগাতে চাইছে।

এই সংশোধনীতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম শরণার্থীদের শর্ত সাপেক্ষে নাগরিকত্বের কথা বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, বিজেপির মিত্রজোটে রয়েছে বড়ল্যান্ডের ইউনাইটেড পিপলস পার্টি লিবারেশন ও অসম গণপরিষদ। মিত্রজোটই নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে হিন্দুদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন তারা নীরব।

আসলে ভোট এলেই অসমীয়া আবেগ কাজে লাগাতে প্রতিবারই অনুপ্রবেশ সমস্যাকে কাজে লাগায় রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু ক্ষমতায় এলে স্থায়ী সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেয় না কোনো দল।

ফলে সংখ্যালঘুরা সমস্যায় পড়েন। অসমে হিন্দুত্ববাদী সরকার গঠিত হলেও বাংলাভাষী হিন্দুদেরও দুর্ভোগ বাড়ছে। বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে হিন্দু বাঙালিরাই বেশি রয়েছেন। এনআরসির শিকারও তারাই বেশি। তাই ভোট মানে তাদের কাছে আতঙ্ক।

কিন্তু সেই আতঙ্ক কাটিয়ে অনুপ্রবেশ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। শুধুমাত্র ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় মিলেছে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি। কিন্তু সমাধান দূরঅস্ত।

এ বিভাগের আরো খবর