বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মমতার সাফল্যের রহস্য

  •    
  • ১৮ মার্চ, ২০২১ ২২:১৮

জীবনের শুরু থেকেই প্রতিবাদী মমতা। লড়াই তার রক্তে। কৈশোরে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে জয়প্রকাশের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে তার ‘বাড়াবাড়ি’ অনেকেরই চোখে পড়ে।

গত শতকের সত্তরের দশকের ঘটনা। সেই সময়ে দেশজুড়ে ইন্দিরা গান্ধীর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের এককাট্টা করে চলেছেন ভারতের প্রবাদপ্রতিম জননেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ। ঠিক এমনই এক সময়ে কলকাতায় এসেছিলেন তিনি।

সেখানে তখন যুব কংগ্রেসের কর্মীরা তাঁর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলেন। তাদেরই মধ্যে এক মহিলা কর্মী জয়প্রকাশের গাড়ির বনেটে উঠে রীতিমতো নাচতে শুরু করলেন। সত্তর দশকের ওই যুব কংগ্রেস কর্মীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনায় খবরের শিরোনামে উঠে আসেন মমতা।

ওই দশকেই কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের হাত ধরে রাজনীতিতে হাতেখড়ি মমতার।

জীবনের শুরু থেকেই প্রতিবাদী মমতা। লড়াই তার রক্তে। তরুণ বয়সে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে জয়প্রকাশের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে তার ‘বাড়াবাড়ি’ অনেকেরই চোখে পড়ে।

১৯৮৪ সালে সিপিএমের হেভিওয়েট নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কংগ্রেস তেমন ভালো প্রার্থী পাচ্ছিল না। একে সোমনাথ, তার ওপর যাদবপুর, যা বাম দলের ঘাঁটি। ভারতের প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী তখন মমতাকেই বেছে নেন।

ভুল করেননি রাজীব। কেউই যেখানে দাঁড়ানোর পক্ষে না, সেখানে মমতা দাঁড়ালেন এবং জিতলেনও। বামদুর্গেই হারিয়ে দিলেন সোমনাথকে। পুরস্কার হিসেবে পেলেন কেন্দ্রের মন্ত্রিত্ব।

কিন্তু তিনি মমতা। মন্ত্রিত্বও বেশিদিন ভালো লাগেনি তার। তাকে করা হয় যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। রাজীব গান্ধীর স্নেহ তার ওপর সবসময়ই ছিল। তাই কংগ্রেসের অনেক নেতাই সমীহ করতেন মমতাকে।

১৯৮৯ সালে যাদবপুরে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত শেষবারের মতো হারতে হয় মমতাকে। সিপিএমের প্রার্থী মালিনী ভট্টাচার্য ফিরিয়ে আনেন বামদুর্গ। তাতেও দমেননি মমতা। বরং আরও বেশি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ে ফেরেন তিনি।

মমতা মানেই চরম বাম বিরোধিতা। সিপিএমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ হিসেবে কংগ্রেসের তাবড় তাবড় নেতাদের পেছনে ফেলে দুর্বার গতিতে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের মন জয় করে নেন তিনি।

১৯৮৯ সালে হারলেও ১৯৯১ সালে কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে জেতেন মমতা। এরপর তাকে আর কেউ হারাতে পারেননি। ’৯১ পর ’৯৬, ’৯৮, ’৯৯, ২০০৪ ও ২০০৯ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

এর মধ্যে কংগ্রেসের ‘হাত’ প্রতীক ছেড়ে মমতা নিজেই তুলে নেন তৃণমূল কংগ্রেসের ‘ঘাসফুল’ প্রতীক। ১৯৯৮ সালে দলটি গঠন করেন তিনি। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ, সিপিএমের সঙ্গে আপোষ করেছে দলটি।

মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে রাজীব গান্ধী, পি ভি নরসিমা রাও, অটলবিহারি বাজপেয়ি ও মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রিসভায় ছিলেন মমতা। দায়িত্ব সামলেছেন রেলসহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু লড়াইয়ের মাটি ছাড়েননি তিনি।

পায়ে হাওয়াই চটি, সাধারণ সুতি শাড়ি আর অতি সাদামাটা জীবনযাত্রাকে পুঁজি করে মমতা ছুটে বেরিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। শারীরিক আক্রমণও তাকে দমাতে পারেনি। ব্যর্থতার পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।

২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে টাটা কোম্পানিকে সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ির কারখানা করতে চাষীদের অমতে জমি দিতে চেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলও (এসইজেড) করতে চেয়েছিলেন তিনি।

ওই দুই ইস্যু নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন মমতা। নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন নিহত হন। শিউরে ওঠে গোটা রাজ্য। আর সিঙ্গুরে অনশনে বসেন মমতা নিজেই।

প্রতিবাদের মুখে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়তে বাধ্য হয় টাটা। নন্দীগ্রামেও হয়নি এসইজেড।

পশ্চিমবঙ্গে টানা ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকা বামদুর্গের পতন ঘটান মমতাই। ২০১১ সালের ২০ মে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি।

নিয়ম মেনে লোকসভা ছেড়ে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে দুইবার বিধায়ক নির্বাচিত হন মমতা। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের মানসিকতা থেকেই লড়ছেন পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম থেকে।

ভারতে এ মুহূর্তে মমতা একমাত্র নারী মুখ্যমন্ত্রী। আঞ্চলিক নেতাদের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয়ও তিনি। এখনও সমান প্রতিবাদী; মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেও প্রতিবাদী চেহারা ছাড়েননি তিনি।

সম্প্রতি পায়ের হাড়ে চিড় ধরেছে মমতার। তবু হুইল চেয়ারে করে দলের হয়ে প্রচারে ব্যস্ত ৬৬ বছর বয়সী এই রাজনীতিক। গোটা রাজ্য চষে বেড়াচ্ছেন। কারণ তার দলের একমাত্র মুখ তিনিই। তাকে ঘিরেই কর্মীদের উচ্ছ্বাস।

১০ বছর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রাজ্যের উন্নয়নে মমতার অবদান কম নয়। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, সামাজিক প্রকল্প থেকে শুরু করে বেশ কিছু ক্ষেত্রে নতুন চিন্তাভাবনার প্রয়োগ করেছেন।

তাই ভোটের মাঠে প্রচারে এসে বিরুদ্ধ শিবিরের প্রধান সেনাপতি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘মমতা দিদিকে আমি বহুদিন চিনি। তিনি খারাপ নন। কিন্তু তার রিমোট কন্ট্রোল এখন অন্যের হাতে।’

মোদির বক্তব্যের লক্ষ্য, মমতার ভাইয়ের ছেলে তৃণমূলের সংসদ সদস্য অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। অভিষেকের প্রতি সন্তানসম দুর্বলতা রয়েছে সংসারজীবনে পা না রাখা মমতার। ঘনিষ্ঠজনেরাও বিষয়টি জানেন। আর তাই অভিষেকের ওপর ক্ষুব্ধ অনেকেই।

অভিষেককে বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্যে ‘তোলাবাজ ভাইপো’ বলেছেন। বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে অভিষেকের বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে নীরব মমতা।

মমতার আমলে সবচেয়ে বড় অভিযোগ- দুর্নীতি। তার আঁকা ছবি কোটি কোটি টাকায় বিক্রি হওয়া নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। আছে তৃণমূলের তৃণমূলস্তর থেকে ওপরতলা পর্যন্ত দুর্নীতির অভিযোগও।

অবশ্য দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তৃণমূলের অনেক নেতা নির্বাচনের আগে দলবদল করে বিজেপি শিবিরে যোগ দিয়েছেন। তাই দেখার পালা, দুর্নীতি মমতার পদ্ম-কাঁটা হয় কি না।

মমতা এবারের বিধানসভা নির্বাচনে জিতলে হ্যাট্রিক করবেন। আর হারলে? ৬৬ বছর বয়সে ফের ময়দানে নেমে তিনি লড়াই করতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকেরই। বিশেষ করে তিনি অসুস্থ। তার শরীরে রয়েছে বহু আঘাতের চিহ্ন।

তবু তিনি মমতা। পশ্চিমবঙ্গের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা সবাই এ বিষয়ে একমত, মমতা পারেন না এমন কোনো কাজ নেই।

বিভিন্ন জনমত সমীক্ষা এখন পর্যন্ত বলছে, দলবদলে ব্যাপক ক্ষতি হলেও পশ্চিমবঙ্গে মমতার নেতৃত্বে ঘাসফুলই ফুটবে।

কলকাতার কালীঘাট এলাকায় সাধারণ এক পরিবারে ১৯৫৫ সালের ৫ জানুয়ারি জন্ম মমতার। মা গায়ত্রী দেবী ও বাবা প্রমীলেশ্বর বন্দোপাধ্যায়। মমতার বাবাছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। কলকাতার শ্রীশিক্ষায়তন কলেজ থেকে বি এ পাস করার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাস করেন। পরে কলকাতার যোগেশচন্দ্র চৌধুরী আইন কলেজ থেকে এল.এল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন।

এ বিভাগের আরো খবর