করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকাদান কার্যক্রমের মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশজুড়ে আবারও রোগের প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। ১৪ মার্চ এ বছরের সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ রেকর্ড করে ভারত ও পাকিস্তান।
করোনার সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পরই রয়েছে ভারত। মহামারির এক বছরে দেশটিতে ছোঁয়াচে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক কোটি ১৪ লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে গত বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হন সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে সেপ্টেম্বরজুড়ে দিনে প্রায় এক লাখ করে মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন করোনাভাইরাসে। অক্টোবর থেকে বিস্তার কমতে শুরু করে। দৈনিক সর্বনিম্ন সংক্রমণ আট হাজারে নেমে আসে ফেব্রুয়ারিতে। তবে মার্চে এ সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ২৭ হাজার ছাড়িয়েছে।
স্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ‘ফার্স্ট ওয়েভে’র সংক্রমণ একেবারে কমে যাওয়ার পর সম্প্রতি সংক্রমণের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জন না হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট। এর মধ্যে রূপ বিবর্তনের মাধ্যমে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস ছড়াতে থাকায় ভারতে মহামারির ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ আসন্ন।
ফেব্রুয়ারিতে হায়াদ্রাবাদভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি (সিসিএমবি) জানিয়েছিল, শুধু ভারতেই ৭ হাজার ৫৬৯টি ভিন্ন ধরনের করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পেয়েছেন গবেষকরা।
এর কিছুদিন পরই কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (সিএসআইআর) মহাপরিচালক শেখর সি মান্ডে বলেন, মহামারি শেষ হওয়া অনেক দূরের কথা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা কমতে থাকায় এর মধ্যেই ‘থার্ড ওয়েভ’ শুরু হওয়ার প্রবণতাও লক্ষ করা যাচ্ছে ভারতে।
গত দুদিনে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, পাঞ্জাবসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে জেলায় জেলায় লকডাউন, কারফিউ জারির সিদ্ধান্তসহ বাড়তি কড়াকড়ি আরোপ করেছে প্রশাসন।
গত কয়েকদিনে করোনায় শতাধিক প্রাণহানি দেখেছে দেশটি। এ পর্যন্ত মারা গেছেন এক লাখ ৫৯ হাজারের বেশি মানুষ।
একই পরিস্থিতি পাকিস্তানেও
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, মহামারি শুরুর পর পাকিস্তানে করোনার বেশি সংক্রমণ দেখা যায় গত জুন মাসে। সে সময় দিনে আট হাজারের মতো রোগী শনাক্ত হচ্ছিল দেশটিতে।
জুলাই নাগাদ পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করলেই নভেম্বরে শুরু হয় সেকেন্ড ওয়েভ। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও মার্চে আবারও করোনার ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্যণীয়।
মঙ্গলবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ সহযোগী ড. জাফর মির্জা প্রশাসনকে সতর্ক করে বলেন, জরুরি ব্যবস্থা না নেয়া হলে দেশটিতে করোনার ‘থার্ড ওয়েভ’ অবধারিত। পরিস্থিতি জুনের ‘ফার্স্ট ওয়েভে’র চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে।
দুদিন আগেই দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশ ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে লকডাউন জারি করা হয়েছে।
পাকিস্তানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন প্রায় ১৪ হাজার মানুষ।
অভিযোগ রয়েছে, দেশটিতে যথাযথ পরীক্ষা হচ্ছে না বলে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি।
এমনকি ভারতে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার হার বেশি হলেও পিসিআর টেস্ট কমিয়ে র্যাপিড টেস্ট বাড়ানোয় করোনা সংক্রমণের প্রকৃত সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
উপমহাদেশের সামগ্রিক অবস্থা
গত জুন মাসে প্রথম করোনার সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ দেখে বাংলাদেশ। লকডাউনের মধ্যেই দিনে চার হাজার ছাড়ায় নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা। ফেব্রুয়ারিতে এ সংখ্যা দু’তিনশতে নেমে আসে, যা এখন বাড়ছে আবার।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান- তিন দেশেই সম্প্রতি করোনায় বেড়েছে প্রাণহানিও। যদিও ‘ফার্স্ট ওয়েভে’র মতো পরিস্থিতি হয়নি। টিকাদান কার্যক্রম চালু থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সচেতন না হলে পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতির শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
সংক্রমণ বাড়ছে আরও কিছু অঞ্চলে
ইউরোপের বেশ কিছু দেশেও সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী।
এক বছর আগে ইতালির করোনা পরিস্থিতিই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বৈশ্বিক মহামারি পরিস্থিতি ঘোষণায় বাধ্য করে। আশঙ্কাজনক সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে ১৫ মার্চ আবারও রোম, মিলান, ভেনিসসহ কমপক্ষে ১০টি অঞ্চলে লকডাউন জারি করা হয়েছে।
সংক্রমণ বাড়ছে বলে দফায় দফায় স্বাস্থ্যবিধি শিথিলের তারিখ ঘোষণা করেও তা পেছাচ্ছে ফ্রান্স-জার্মানি। দেশজুড়ে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছে ফ্রান্স।