ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকা সত্ত্বেও টিকা রপ্তানি অব্যাহত রাখায় সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। চাপে রয়েছে টিকা উৎপাদনকারী বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটও।
মঙ্গলবার পার্লামেন্ট অধিবেশনেও উত্তাপ ছড়ায় বিষয়টি। ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের আইনপ্রণেতারা অভিযোগ করেন, প্রতিদিন দেশে যে পরিমাণ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হচ্ছে, তার দ্বিগুণ টিকা রপ্তানি করা হচ্ছে বিদেশে। মহামারি পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতির মধ্যে বিষয়টির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আইনপ্রণেতারা।
গত জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভারতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রায় দুই মাসে দেশটিতে টিকা নিয়েছেন সোয়া ৩ কোটির বেশি মানুষ। বিপরীতে বিভিন্ন দেশে উপহার হিসেবে পাঠানো এবং বিক্রি করা হয়েছে প্রায় ৬ কোটি ডোজ।
বিশ্বে করোনা প্রতিরোধে উৎপাদিত টিকার বড় অংশ কুক্ষিগত রাখার অভিযোগে অভিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন ধনী দেশ। মোট জনসংখ্যার কয়েক গুণ বেশি ডোজ কিনে নিয়েছে দেশগুলো। বিপরীতে এখন পর্যন্ত এক ডোজও টিকা পায়নি শতাধিক দেশ।
এ তালিকায় ব্যতিক্রম ভারত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকা উৎপাদনকারী দেশটি এ পর্যন্ত ৭১টি দেশে টিকা রপ্তানি করেছে।
মূলত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা ফার্মাসিউটিক্যালসের গবেষণালব্ধ টিকাটি উৎপাদন ও বিক্রি করছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। এ ছাড়া নিজস্ব প্রযুক্তিতে উদ্ভাবিত ভারত বায়োটেকের টিকাও যাচ্ছে কিছু দেশে।
তবে মহামারির এ পর্যায়ে বিদেশে রপ্তানির বদলে নিজ দেশেই টিকার অধিক প্রয়োগ দাবি ভারতীয়দের। কেবল প্রবীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে টিকা প্রয়োগ সীমিত না রেখে ৪৫ বছরের বেশি বয়সের এবং বিভিন্ন রোগে ভুগছেন- এমন মানুষদেরও টিকার আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে ‘হ্যাশট্যাগ ইন্ডিয়া নিডস মোর ভ্যাকসিন’ ব্যবহার করে ভারতের ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে বিরোধী দল কংগ্রেস। নিজ দেশকে বাদ দিয়ে ভিনদেশের মানুষকে অগ্রাধিকার দেয়া, ভারতীয়দের স্বার্থ উপেক্ষা করে জনসংযোগ ও জনপ্রিয়তা বাড়াতে টিকা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে মোদির বিরুদ্ধে।
ভারসাম্য রেখেই টিকা রপ্তানি
বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে পার্লামেন্টে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন বলেন, জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে টিকা রপ্তানি করা হচ্ছে না। বরং এ দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার ওপর সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশের পর ভারতে টিকা কার্যক্রমের গতি বাড়ে। কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশের তুলনায় জনসংখ্যার অনুপাতে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা ভারতে কম, বলছে রয়টার্স। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিকটতম প্রতিবেশী ভারতে উৎপাদিত টিকাই দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে।
আগস্টের মধ্যে ৩০ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা ভারত সরকারের।
মহামারি পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আবারও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
মহারাষ্ট্রে বেশ কিছু জেলায় লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। সিনেমা হল, হোটেল, রেস্তোরাঁয় অতিথিসংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে অর্ধেকে সীমিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠান ও অন্যান্য সামাজিক আয়োজনও সীমিত পরিসরে করার আহ্বান জানানো হয়েছে।