শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের দমনে প্রাণঘাতী কৌশল ও যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে বলে দাবি করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
মিয়ানমারে গত কয়েক সপ্তাহের গণবিক্ষোভের ফুটেজ ও ছবি বিশ্লেষণ করে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি এমন দাবি করে।
প্রতিবেদনে মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, ৫৫টি ভিডিও ক্লিপে কাঠামোগত ও পূর্বপরিকল্পিত হত্যার প্রমাণ আছে।
মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
অ্যামনেস্টির সংকট মোকাবিলাবিষয়ক পরিচালক জোয়ান মেরিনার বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এসব সামরিক কৌশল একেবারেই নতুন কিছু নয়। কিন্তু তাদের হত্যাযজ্ঞ এর আগে কখনো সরাসরি সম্প্রচার করে বিশ্বকে দেখানো হয়নি।’
সংস্থাটির সংকটসংক্রান্ত নথি ল্যাব (ক্রাইসিস এভিডেন্স ল্যাব) চলমান দমন-পীড়নের ৫০টির বেশি ভিডিও যাচাই-বাছাই করেছে। তারা নিশ্চিত করেছে, নিরাপত্তা বাহিনী দৃশ্যত পরিকল্পিত ও কাঠামোগত কৌশল নিয়েছে, যার মধ্যে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহারও রয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাটির ভাষ্য, ‘(ভিডিওতে) উঠে আসা অনেক হত্যাকাণ্ডকে বিচার-বহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সঙ্গে তুলনা করা যায়।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায়, তাতমাদো হিসেবে পরিচিত মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে অস্ত্রের ব্যবহার ক্রমবর্ধমান হচ্ছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রের জন্যই খাটে। পুলিশি তৎপরতার জন্য অস্ত্রের এমন ব্যবহার কোনোভাবেই সমীচীন নয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা বেপরোয়া আচরণ করছে। জনাকীর্ণ এলাকাগুলোতে তাদের নির্বিচার গুলি চালাতেও দেখা গেছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা অং সান সুচিসহ তার নেতৃত্বাধীন সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এর পর থেকেই সংকটে আছে দেশটি।
অভ্যুত্থানের পর প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ হচ্ছে মিয়ানমারে। দেশটিতে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে অনেক সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবী কর্মবিরতি পালন করছেন। তাদের দমাতে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
রাজনৈতিক বন্দিদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা অ্যাসিস্টেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের (এএপিপি) হিসাব অনুযায়ী, চলমান আন্দোলনে ৬০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার জনকে।