আধুনিক যুগেও ইরানে নারী ও কন্যাশিশুরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচিত। সোমবার জাতিসংঘের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত হয় প্রতিবেদনটি।
জাতিসংঘে ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ দূত ও স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ জাভেদ রেহমান এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেন। এতে বলা হয়, জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই চরম বৈষম্যের শিকার ইরানের নারীরা। উদ্বেগ জানানো হয় নারীদের ওপর পারিবারিক সহিংসতা নিয়েও।
আরব নিউজ জানিয়েছে, প্রতিবেদনে নারীদের ওপর অ্যাসিড সন্ত্রাস বন্ধে ইরান সরকারের গৃহীত নতুন আইনের প্রশংসা করেন রেহমান। যদিও নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে আরও অনেকটা পথ যেতে হবে দেশটিকে, এমন মতও ব্যক্ত করেন তিনি।
রেহমান বলেন, ‘পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধ আর নারীবিদ্বেষী আচরণে জর্জরিত ইরানের নারীদের নিত্যদিনের জীবন। বৈষম্যমূলক আইনের কারণে দিনদিন পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা বেড়ে চলছে দেশটিতে।
বাল্যবিবাহের ওপর আলোকপাত করে বলা হয়, গত বছরের ছয় মাসে দেশটিতে ১০ বছর থেকে ১৪ বছর বয়সী ১৬ হাজার কন্যা শিশুর বিয়ে হয়েছে। রেহমান বলেন, ‘নারী ও মেয়ে শিশুদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে বাল্যবিবাহের প্রশ্ন। ইরানে বিয়ের ন্যূনতম বয়স নিয়ে যে আইন রয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী, ইরানে বাবার অনুমতি সাপেক্ষে কন্যাসন্তানের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৩ বছর। বিচারকের বিশেষ অনুমতি নিয়ে আরো কমবয়সেও মেয়েদের বিয়ে হওয়ার নিয়ম আছে দেশটিতে।
রেহমান বলেন, ‘দেশের এবং নারীদের উন্নয়নের পথে বাল্যবিবাহ বড় বাধা। শিক্ষা, কর্মসংস্থান আর সহিংসতামুক্ত জীবন- সবকিছুতেই নারীদের পথে বড় বাধা হয়ে থাকছে বাল্যবিবাহ।’
ইরানে সফরের অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও সংবাদ সংস্থার তথ্য ব্যবহার করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন জাভেদ রেহমান। এ ছাড়া ভুক্তভোগী নারী, তাদের পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীদের সাক্ষাৎকারও নেন তিনি।
জানা যায়, হয়রানি, গ্রেপ্তার, কারাদণ্ডের ভয় নিয়ে কাজ করতে হয় নারী অধিকার কর্মীদের; বিশেষ করে যারা বাধ্যতামূলক পর্দা প্রথার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান।
রেহমান জানান, বিয়ে, বিচ্ছেদ, কর্মসংস্থানসহ সব ক্ষেত্রেই নারী-পুরুষের বৈষম্য প্রকটভাব দৃশ্যমান ইরানে। দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয় নারীদের।
প্রতিবেদনে আরো উঠে আসে বিরোধিতাকারীদের ওপর তেহরানের চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনেক ঘটনা।
বলা হয়, ইরান সরকারের আক্রমণ থেকে বাদ পড়ছে না নারী, শিশু, মানবাধিকার কর্মী, সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠী, লেখক, সাংবাদিক ও দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে- এমন ব্যক্তিরা। নির্যাতন, নিপীড়ন, হয়রানি, বিচারবহির্ভূত আটক, জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা, মৃত্যুদণ্ডসহ নানাভাবে ভোগান্তির শিকার এই বিপুলসংখ্যক মানুষ।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থাতেও (ইউএনএইচআরসি) গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন রেহমান।