কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের খুন করতে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তের নির্দেশের ৭২ ঘণ্টা পার না হতেই দেশটিতে পুলিশের অভিযানে ৯ জন নিহত হয়েছে।
রোববারের এই অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ছয়জনকে। পালিয়ে গেছে আরও ছয় বিদ্রোহী।
ফিলিপাইন পুলিশের বরাত দিয়ে সোমবার এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার উত্তরের তিন প্রদেশে কমিউনিস্ট নিধন অভিযানে নামে পুলিশ।
পুলিশের ভাষ্য, বিদ্রোহের অভিযোগে অন্তত ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন রোববারের অভিযানে নিহত হয়।
তবে এসব ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ক্যাভিট প্রদেশের শ্রমিক নেতা এমানুয়েল অ্যাসানসিওনও আছেন বলে বিবৃতিতে দাবি করেছে মৎস্যজীবীদের সংগঠন ‘পামালাকায়া’।
ইউনিভার্সিটি অব দ্য ফিলিপিনসের শিক্ষার্থীদের প্রকাশনী ‘ইউপিএলবি পারসপেক্টিভ’ জানিয়েছে, বাটাঙ্গাস প্রদেশে এক শ্রমিক সংগঠক দম্পতিকে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে ১০ বছর বয়সী সন্তানসহ তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সরকারি বাহিনী তাদের তুলে নিয়ে গেলেও এ ঘটনায় দায় স্বীকার করেনি কেউ।
রোববার রিজাল প্রদেশেও দুই অধিকারকর্মীকে গুলি করে হত্যার কথা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন কারাপাতান। সংগঠনটির মহাসচিব ক্রিস্টিনা পালাবের অভিযোগ, ‘প্রেসিডেন্ট দুতের্তের দেয়া হত্যার নির্দেশ আবশ্যিক হিসেবে নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।’
ফিলিপাইনে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এসব ঘটনাকে কর্তৃপক্ষের ‘সাজানো পরিকল্পনা’ বলে বর্ণনা করেছে সংস্থাটি।
ফিলিপাইনে কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরকারের দ্বন্দ্ব পাঁচ দশকের বেশি সময়ের। দেশটির সেনাবাহিনীর হিসাব অনুযায়ী, কমিউনিস্টদের সঙ্গে লড়াইয়ে গত ৫৩ বছরে প্রাণ গেছে ৩০ হাজারের বেশি মানুষের।
কমিউনিস্টদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় সরকারপ্রধানরা শান্তি আলোচনায় বসলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। ফিলিপাইনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হোসে মারিয়া সিসন নেদারল্যান্ডসে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে আছেন।
মিন্দানাওয়ে শুক্রবার কমিউনিস্টবিরোধী এক আলোচনা সভায় প্রেসিডেন্ট দুতের্তে বলেন, ‘পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি, তারা যখনই বন্দুকযুদ্ধে কোনো কমিউনিস্ট বিদ্রোহীকে পাবে, তাদের মৃত্যু হয়েছে এটা যেন তারা নিশ্চিত করে।’
আরও পড়ুন: কমিউনিস্টদের খুনের নির্দেশ দুতের্তের
এ সময় কমিউনিস্টরা অস্ত্র ফেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলে তাদের চাকরি ও বাসস্থান নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট।
২০১৬ সালে ক্ষমতায় এসেই দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করেন দুতের্তে। বিতর্কিত এ অভিযানে নিহত হন আট হাজারের বেশি মানুষ।