ইরানে প্রায় পাঁচ বছর বন্দি থাকার পর মুক্তি পেলেন ইরানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক নাজানিন জাঘারি-র্যাটক্লিফ। গুপ্তচরবৃত্তি ও দেশদ্রোহিতার অভিযোগে সাজা ভোগ করছিলেন দাতব্য কাজের সঙ্গে যুক্ত এই নারী।
বিবিসি জানিয়েছে, সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় নাজানিনের পা থেকে বৈদ্যুতিক ট্যাগ খুলে ফেলা হয়েছে। তবে এর মধ্যেই নতুন একটি মামলায় নাম যুক্ত হয়েছে ৪৩ বছর বয়সী নাজানিনের।
রোববার আইনজীবী হুজ্জাত কিরমানি ইরানের স্থানীয় ইমতিদাদ নিউজকে জানান, আবারও নাজানিনের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে দেশটির এক আদালত। আগামী রোববার শুনানির জন্য আদালতে হাজিরা দিতে হবে তাকে।
কিরমানি বলেন, ইরানে ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিতর্কিত ফলের বিরুদ্ধে লন্ডনে ইরানি দূতাবাসের বাইরে এক বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন নাজানিন। এ ইস্যুতে সে সময় বিবিসির পার্সিয়ান বিভাগকে একটি সাক্ষাৎকারও দেন তিনি। এসব কারণে তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল তেহরান।
২০১৬ সালের এপ্রিলে শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ইরানে গেলে গ্রেপ্তার হন নাজানিন। ইরানের সরকার পতনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে, যা অস্বীকার করেন তিনি। এরপর পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।
তাকে গ্রেপ্তার ও আটকাদেশে সে সময় ইরান ও যুক্তরাজ্যের কূটনীতিতে ফাটল দেখা দেয়। তার তাৎক্ষণিক মুক্তির জন্য লন্ডনের অনুরোধের তোয়াক্কাও করেনি তেহরান।
তবে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ সালে কারাগার থেকে সরিয়ে নিজ বাড়িতে গৃহবন্দি রাখা হয় নাজানিনকে।
এদিকে, নতুন মামলার শুনানিতে অংশ নিতে সমন জারি হওয়ায় কবে নাগাদ যুক্তরাজ্যে ফিরতে পারবেন নাজানিন, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
টুইটারে এ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব। তিনি লিখেছেন, ‘নাজানিন জাঘারি-র্যাটক্লিফের পায়ের বৈদ্যুতিক ট্যাগ খুলে নেয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু তার প্রতি ইরান সরকারের বিরূপ আচরণ অব্যাহত থাকার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। অবিলম্বে যুক্তরাজ্যে নিজ পরিবারের কাছে তাকে ফিরতে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
ইরানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থে নাটক সাজিয়ে বিদেশি নাগরিকদের আটকে রাখার অভিযোগ রয়েছে ব্রিটিশ সরকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর। তাদের দাবি, এরকম অনেক ঘটনার একটি নাজানিনের বিরুদ্ধে মামলা।
এসব অভিযোগ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। দেশটির আইনে দ্বৈত নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। ফলে নাজানিনকে ইরানের নাগরিক বিবেচনায় পুরো বিষয়টিকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ ইস্যু এবং স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি তেহরানের।