সীমান্তপথে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ফেরত চেয়েছে মিয়ানমার। সেনাবাহিনীর নির্দেশ এড়াতে নিজ দেশ ছেড়ে প্রতিবেশি দেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা।
শনিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
ভারতের মিজোরাম রাজ্যের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার সূত্র উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি মিয়ানমারের পুলিশ ও তাদের পরিবারের সদস্যরাসহ প্রায় ৩০ জন ভারতে আশ্রয় চেয়েছেন। ১ ফেব্রুয়ারির সেনা অভ্যুত্থানের পর বিক্ষোভকারীদের ওপর শাসকগোষ্ঠী কঠোরতর হওয়ায় এবং সহিংসতা বাড়তে থাকার মধ্যে দেশ ছেড়ে পালান তারা।
মিজোরামের চাম্পাই জেলার উপকমিশনার মারিয়া সি টি জুয়ালি বলেন, মিয়ানমারের ফালাম জেলার উপকমিশনারের কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছেন তিনি। দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে আট পুলিশ কর্মকর্তাকে আটক করে মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তরের অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।
এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছেন মারিয়া।
চিঠিটির একটি অনুলিপি যাচাই করেছে রয়টার্স। এতে লেখা রয়েছে, অনুমতি ছাড়া ভারতীয় ভূখণ্ডে পালিয়ে যাওয়া এক নারীসহ কমপক্ষে আট পুলিশ কর্মকর্তার তথ্য রয়েছে মিয়ানমারের প্রশাসনের হাতে। তালিকার চার কর্মকর্তার বয়স ২২ বছর থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।
মিয়ানমারে সেনাশাসনবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের সমর্থনের খবর আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে । তবে এর আগে তাদের দেশ ছেড়ে পালানোর খবর জানা যায়নি।
এ ব্যাপারে জানতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে রয়টার্স। তাৎক্ষণিকভাবে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও একদিন আগের সংবাদ সম্মেলনে জানানো তথ্যের পুনরাবৃত্তি করেছে নয়া দিল্লি। বলেছে, আপাতত মিয়ানমারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত সরকার।
এদিকে, মিজোরাম রাজ্যে ঢল নামছে মিয়ানমারের শরণার্থীদের। এ নিয়ে ইতোমধ্যেই সতর্ক ভারত।
ভারত-মিয়ানমারের মধ্যকার ১ হাজার ৬৪০ কিলোমিটার স্থলসীমান্তের পাহাড়ি দুর্গম এলাকার কোনো কাঁটাতারের বেড়া নেই। নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে ভারতীয় সেনার নেতৃত্বে থাকা আধা-সামরিক বাহিনী আসাম রাইফেলস।
মিয়ানমার ও ভারতের নাগরিকরা একে অন্যের দেশের ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিনা পাসপোর্ট বা ভিসায় যাতায়াত করতে পারেন। সীমান্তের দু্ই পারের বাসিন্দাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্কও রয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ফেন্সিং বা কাঁটাতারের বেড়া দিতে চাইলে স্থানীয়রাই বড় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছেন। নাগাল্যান্ড, মনিপুর ও মিজোরামের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক বহুদিনের। এখানকার সন্ত্রাসীরাও বহুদিন ধরে মিয়ামারে আশ্রিত।
মিজোরামের বাসিন্দাদের সঙ্গে আবার আত্মীয়তার সম্পর্ক মিয়ানমারের নাগরিকদের সঙ্গে। মিয়ানমার থেকেই ভারতে আসেন মিজোরা। রাজ্যটির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত ৫১০ কিলোমিটার দীর্ঘ।
১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সামরিক শাসন জারি থেকেই নতুন করে অশান্তির সূত্রপাত। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে চলমান আন্দোলন ও সহিংসতার মধ্যে অনেকেই দেশ ছাড়তে চাইছেন। এ অবস্থায় ভারতে আশ্রয়প্রার্থীদের উদ্দেশে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা বলেছেন, 'মিয়ানমার থেকে কেউ আসতে বাধ্য হলে তাদের আশ্রয় দেয়া হবে। কারণ রাজ্য সরকার ও মিজোরা এটাই চাইছে।'
ইতিমধ্যেই মিজোরামের শেরপি জেলা বিশাল কমিউনিটি হলকে প্রস্তুত করা হয়েছে শরণার্থীদের জন্য। উত্তর ভেলানফা শহর দিয়ে শরণার্থীরা ঢুকছে বলেও জানা গিয়েছে।
শরণার্থীর ঢল নামার আশঙ্কা শেরপি ছাড়াও চাম্পেই ও সিয়াহা জেলায়।
রাজ্য সরকার শরণার্থী সমস্যা নিয়ে দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছে।