বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সমাবেশে মুসলিম নেতার উপস্থিতি, জোট বাঁধার প্রশ্নে বিভক্ত কংগ্রেস

  •    
  • ২ মার্চ, ২০২১ ১৮:৩৩

গত রোববার কলকাতায় কংগ্রেস-বাম দলের সমাবেশে হাজির হন আব্বাস। সে সময় সেখানে বক্তব্য রাখছিলেন পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের প্রধান অধীর রঞ্জন চৌধুরী। আব্বাসের উপস্থিতিতে জনতার বাঁধভাঙা উল্লাসে তখন মাঝপথেই বক্তব্য থামাতে বাধ্য হন কংগ্রেস নেতা।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তরুণ নেতা আব্বাস সিদ্দিকি বাম দল ও কংগ্রেসের এক সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার পর থেকেই শোরগোল উঠেছে রাজ্যের রাজনীতিতে। বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে মুসলিম নেতার সঙ্গে জোট বাঁধার প্রশ্নে কংগ্রেসের ভেতরেই সৃষ্টি হয়েছে কোন্দল।

এনডিটিভি জানিয়েছে, ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) প্রধান আব্বাস সিদ্দিকি সমর্থকদের মধ্যে ‘ভাইজান’ হিসেবে সুপরিচিত। কলকাতা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের হুগলি জেলায় অবস্থিত ফুরফুরা শরিফ মাজারের পীরজাদা তিনি। আজমির শরিফের পর ভারতে মুসলিমদের কাছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ এই মাজারটি।

ভক্ত-সমর্থকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় আব্বাস সিদ্দিকি এক ডাকে জনতার ভিড় জমানোর মতো নেতা বলেই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেসের মতো বড় দলগুলোর জন্যও।

গত রোববার কলকাতায় কংগ্রেস-বাম দলের সমাবেশে হাজির হন আব্বাস। সে সময় সেখানে বক্তব্য রাখছিলেন পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের প্রধান অধীর রঞ্জন চৌধুরী। আব্বাসের উপস্থিতিতে জনতার বাঁধভাঙা উল্লাসে তখন মাঝপথেই বক্তব্য থামাতে বাধ্য হন কংগ্রেস নেতা।

বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হলে কেন্দ্রীয় কংগ্রেস নেতা, রাজ্যসভার সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আনন্দ শর্মার তোপের মুখে পড়েন অধীর রঞ্জন। অধীরের উদ্দেশ্যে আনন্দের প্রশ্ন, আইএসএফ প্রধানের সঙ্গে এ মঞ্চে কী করছিলেন তিনি?

টুইটারে আনন্দ শর্মা লেখেন, ‘আইএসএফ এবং এ ধরনের দলগুলোর সাথে জোটবদ্ধ হওয়া কংগ্রেসের মৌলিক আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গান্ধী আর নেহরু যে ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য লড়াই করেছিলেন, এ দলের আত্মার সমতূল্য সে আদর্শ। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল।’

তিনি আরও লেখেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রশ্নে কংগ্রেস কখনোই কোনো বাছবিচার করবে না। সব ধরনের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেই লড়বে দলটি। আইএসএফ প্রধানের সঙ্গে এক মঞ্চে পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেস প্রধানের উপস্থিতি ও তাকে সমর্থন লজ্জাজনক। তাকে এ কাজের জবাবদিহি করতে হবে।’

জ্যেষ্ঠ এ নেতার ক্ষোভের পাল্টা জবাব দিয়ে অধীর রঞ্জন জানিয়েছেন, দলের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের অনুমতি না থাকলে এ ধরনের পদক্ষেপ কখনোই নিতেন না তিনি।

মঙ্গলবার স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে তিনি জানান, কয়েকজন কংগ্রেস নেতা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি- দু’পক্ষের সাথেই যোগাযোগ রাখছেন বলে খবর পেয়েছেন তিনি। মার্চ-এপ্রিলের নির্বাচনে বিজেপি বা তৃণমূল কংগ্রেস- যে দলই জিতবে, সে দলকেই সমর্থন দিতে প্রস্তুত রাজ্যের বেশ কয়েকজন কংগ্রেস বিধায়ক।

কংগ্রেস থেকেই এসব কথা ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তার।

সমাবেশে আব্বাস সিদ্দিকি উপস্থিত হওয়ার পর তার ভাষণের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে অধীরকে অনুরোধ করেন সিপিএম নেতা মোহাম্মদ সেলিম। সে সময় ক্ষুব্ধ হয়ে অধীর মঞ্চ ছাড়তে গেলে আরেক বাম নেতা বিমান বসু তাকে থামান এবং বক্তব্য অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেন।

যদিও বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত দাবি করছেন রাজ্য কংগ্রেসের প্রধান। তার দাবি, জনতা আব্বাসকে দেখে উচ্ছ্বসিত হওয়ায় সে কোলাহল থামার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। তারপর আবার কথা বলেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে সুযোগ হাতছাড়া করছে না প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি আর তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা। আব্বাসের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে বাম দলগুলো আর কংগ্রেস, বলছে বিজেপি। অপরদিকে বিজেপি আর কংগ্রস- দু’দলকে লক্ষ্য করে তৃণমূল বলছে, ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ খুলে পড়েছে তাদের।

যদিও রাজ্যের বাম নেতাদের জবাব, আব্বাস বা তার পোশাক কোনো দিক থেকে সাম্প্রদায়িক নয়। তারা বলছেন, আব্বাস সূফি মতাদর্শের অনুসারী বলে কট্টর নন, বরং মধ্যপন্থি।

বলা হচ্ছে, রাজ্যে বাম নেতাদের অনেকেই আব্বাসের সঙ্গে জোট গড়া নিয়ে অস্বস্তিতে থাকলেও তার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে অনড় ঊর্ধ্বতন নেতারা।

আর আইএফএস ও আব্বাস প্রশ্নে রাজ্য কংগ্রেসে তো বটেই, দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছে কেন্দ্রীয় কংগ্রেসেও। গত জানুয়ারিতে আইএফএস-কংগ্রেস ঐক্যের প্রস্তাব প্রথম দেন পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস বিধায়ক আব্দুল মান্নান। এ জন্য দলীয় সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে চিঠিও লেখেন তিনি।

এ নিয়ে সে সময় অসন্তুষ্ট ছিলেন অধীর রঞ্জন চৌধুরীও। কারণ কংগ্রেসের আগে বাম নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছিল আইএফএস।

অবশ্য এতটুকুতেই সীমিত নেই আব্বাস সিদ্দিকি। জানা যায়, ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের প্রভাবশালী ইসলামপন্থি দল অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে আইএফএসের। গত ৩ জানুয়ারি এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি কলকাতা যান। তিনি নিজে হুগলির ফুরফুরা শরিফে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিতে পরামর্শ দেন আব্বাস সিদ্দিকিকে। যদিও এ বিষয় নিয়ে কখনোই প্রকাশ্যে কোনো কথা বলেনি এআইএমআইএম।

তবে শুক্রবার এনডিটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আব্বাস বলেন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে মমতার তৃণমূল আর মোদির বিজেপিকে হটাতে কংগ্রেস-এআইএমআইএমসহ যেকোনো দলের সহযোগিতা নিতেই প্রস্তুত তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর