মিয়ানমারের সামরিক শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করতে আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য দেয়ার পরের দিনই জাতিসংঘে নিজেদের দূতকে বরখাস্ত করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে শুক্রবার আবেগময় বক্তব্যে কিয়াও মোয়ে তুন বলেছিলেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা কারও উচিত হবে না।
মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনর্বহাল করতে দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বানও জানান কিয়াও মোয়ে।
ক্ষমতাচ্যুত অং সান সু চির সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন জানিয়ে এই দূত বলেন, ‘অচিরেই এই সামরিক অভ্যুত্থানের পতন ঘটাতে, নির্দোষ জনগণের ওপর নিপীড়ন থামাতে, জনগণের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে এবং গণগন্ত্র পুনর্বহাল করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আমাদের আরও কঠোর পদক্ষেপ দরকার।’
কিয়াও মোয়ে তুন এই বক্তব্য ব্যাপক প্রশংসা পায়; ‘সাহসী ভাষণ’ হিসেবে উল্লেখ করেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন দূত লিন্ডা টমাস গ্রিনফিল্ড।
বক্তব্যের পর কিয়াও মোয়ে তিন আঙুলের স্যালুট দেখান, যা মিয়ানমারে স্বৈরশাসন আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদী অঙ্গভঙ্গি হিসেবে পরিচিত।
এই ভাষণের পরপরই জাতিসংঘে প্রতিনিধিত্ব থেকে কিয়াও মোয়েকে বরখাস্তের খবর আসে মিয়ানমারের রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে।
এক ঘোষণায় বলা হয়, ‘কিয়াও মোয়ে দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে না, এমন একটি অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। একজন দূত হিসেবে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দায়িত্বে অবহেলা করেছেন।’
১ ফেব্রুয়ারির ভোরে অং সান সু চিসহ গণতান্ত্রিক উপায়ে জয়ী নেতাদের গ্রেপ্তার করে মিয়ানমারে এক বছরের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ক্ষমতা দখল করে সেনারা।
দেশটির সামরিক অভ্যুত্থানে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বিশ্ব এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো। মিয়ানমারের সেনাদের ওপর অবরোধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশ।
অভ্যুত্থানের পর থেকেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের জনগণ। সেনাবিরোধী আন্দোলনে এরই মধ্যে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজনের, আহত হয়েছেন অনেকে। শনিবারও গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে সেনাবিরোধী বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।