গর্ভে সাত মাসের সন্তান নিয়ে স্বামীর সঙ্গে সাগরতীরের উঁচু পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন সেমরা আয়সাল। চূড়ার কাছে পৌঁছে উচ্ছ্বসিত সেমরাকে নিয়ে সেলফি তোলেন স্বামী হাকান আয়সাল।
আর তার পরেই ঘটে ভয়ংকর ঘটনা। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেন হাকান। যে স্বামীর হাত ধরে খানিক আগেই আনন্দে উদ্বেল হয়েছিলেন সেমরা, তার নির্মমতার শিকার হয়েই প্রাণ হারান তিনি। মৃত্যু হয় গর্ভের সন্তানেরও।
তুরস্কের মুগলার বাটারফ্লাই উপত্যকায় প্রায় দুই বছর আগে পরিকল্পিত এই হত্যার বিষয়টিকে ভালোভাবেই ধামাচাপা দিয়েছিলেন আয়সাল। তবে ওই পাহাড়ে একই সময়ে চড়া এক পর্যটকের ভিডিও এবং সেমরার জীবন বিমার টাকা তুলতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি ধরা পড়েন।
আয়সালকে গ্রেপ্তারের পর তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তুর্কি পুলিশ।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের জুনে ইজিয়ান সাগরতীরের বাটারফ্লাই উপত্যকায় সাত মাসের গর্ভবতী স্ত্রী সেমরাকে ঘুরতে নিয়ে যান হাকান আয়সাল। এর কিছু দিন আগেই সেমরার জীবন বিমা করানো হয়েছিল।
বাটারফ্লাই উপত্যকায় ঘুরতে গিয়ে স্বামীর সঙ্গে সেলফি তুলেছিলেন সেমরাও
পাহাড়ের চূড়ায় স্ত্রীকে নিয়ে বেশ ছবি তোলেন হাকান। তদন্তকারীরা বলছেন, চূড়ায় পৌঁছে প্রায় তিন ঘণ্টা স্ত্রীকে নিয়ে অপেক্ষা করেন তিনি। যখন নিশ্চিত হন আশপাশে আর কেউ নেই, ঠিক তখনই সেমরাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন হাকান।
প্রায় হাজার ফুট নিচে পড়ে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয় সেমরার। সেমরার অন্তিম সময়ের কিছু দৃশ্য ধরা পড়ে এক পর্যটকের ক্যামেরায়। তিনি বলছেন, হাকানের আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় ভিডিও ধারণ করেন তিনি।
সেমরাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়ার আগ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করেন একজন পর্যটক
তুরস্কের তদন্তকারীরা জানান, ৪ লাখ তুর্কি লিরার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৯ লাখ টাকা) বিমা ছিল সেমরার নামে, যার নমিনি ছিলেন স্বামী হাকান। ওই টাকার লোভেই স্ত্রীকে হত্যা করেন তিনি।
সেমরার মৃত্যুকে শুরুতে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন হাকান। তবে জীবন বিমার টাকা তুলতে গেলে বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। তদন্তের কারণে হাকানকে টাকা দেয়াও বন্ধ রাখে বিমা কোম্পানি।
সেমরার ভাই নাইম ইয়োলচু বলেন, ‘আমার বোন মারা যাওয়ার পর হাকানের মধ্যে কোনো ভাবাবেগ দেখিনি। আমরা যখন সেমরার মরদেহ ফরেনসিক মেডিসিন ইনস্টিটিউট থেকে আনতে যাই, হাকান তখন গাড়িতে ঠায় বসেছিলেন। আমরা ভেঙে পড়েছিলাম, কিন্তু হাকান ছিলেন স্বাভাবিক।’