বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনাকালে ফলল চীনা যুবকের সব ভবিষ্যদ্বাণী

  •    
  • ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২০:৫৫

করোনাভাইরাসে মৃত্যু নিয়ে দুটি সনামধন্য প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় ব্যাপক তারতম্য ভাবিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী ২৬ বছর বয়সী ইউওয়াং গু-কে। সময়ক্ষেপণ না করে মহামারিতে মৃত্যুবিষয়ক সঠিক ও গ্রহণযোগ্য উপাত্ত প্রকাশ করতে দ্রুত কাজ শুরু করে দেন এই চীনা যুবক।

২০২০ সালের শুরুর দিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে নাকাল বিশ্ববাসী। সবার দৃষ্টি ছিল তখন কী হতে যাচ্ছে আগামীর দিনগুলোতে। স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশ্বের শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন ও ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভেলিউশনের (আইএইচএমই) দেয়া তথ্যের ওপর মুখিয়ে আছে বিশ্বের শত কোটি মানুষ।

গত বছর এপ্রিলের শুরুতে ইম্পেরিয়াল কলেজ সতর্ক করে বলে আগস্টের মধ্যে মহামারিতে কেবল যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর সংখ্যা ২ লাখ ছাড়াবে। তবে একই সময়ে মৃতের সংখ্যা অনেক কম হবে বলে উপাত্ত প্রকাশ করে আইএইচএমই । যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে অবস্থিত বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানটির তথ্য মতে মৃত্যুর সংখ্যা ৬০ হাজারের বেশি ছাড়াবে না।

নির্ধারিত সময় আগস্টে দেশটিতে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা ছাড়িয়েছিল ১ লাখ ৬০ হাজার।

দুটি সনামধন্য প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় এমন তারতম্য ভাবিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী ২৬ বছর বয়সী ইউওয়াং গু-কে। সময়ক্ষেপণ না করে করোনাভাইরাসে মৃত্যুবিষয়ক সঠিক ও গ্রহণযোগ্য উপাত্ত প্রকাশ করতে দ্রুত কাজ শুরু করে দেন এই চীনা যুবক।

গু সবেমাত্র ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। পাশাপাশি গণিত শাস্ত্রেও তিনি উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। এই দুই উচ্চতর শিক্ষায় ডাটা নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাকে করোনাভাইরাসে মৃত্যুবিষয়ক উপাত্ত নিয়ে বিশ্লেষণ করতে অনেক বেশি সহায়তা করেছে।

এপ্রিলের শেষ দিকে গু তার মডেল ব্যবহার করে জানান ৯ মে যুক্তরাষ্ট্রে কোভিডে মৃত্যুর মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৮০ হাজারে। দুই সপ্তাহ পরে তার অনুমিত মৃত্যুর সংখ্যা সত্য প্রমাণিত হয়। মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৯ হাজার ৯৬৭ জন। পার্থক্য কেবল ৩৩।

গু জানান, দেশটিতে ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৯০ হাজার ছাড়াবে ১৮ মে। আর ২৭ মে মোট মৃত্যু ১ লাখ ছোঁবে। শুধু সময়ের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী এই চীনা যুবকের গবেষণালব্ধ ফলাফলগুলো পুরোপুরি সত্য বনে যায়।

ঠিক একই সময় ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে অবস্থিত বিশ্বের শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএইচএমই জানায়, গোটা ২০২০ সালেও যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ৮০ হাজার ছাড়াবে না। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় মৃত্যুর টালি আটকে যাবে ৮০ হাজারের ঘরে।

ঠিক তখনই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে গু জানান, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ আসছে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করা ও বাসিন্দাদের চলাচলে বিধিনিষেধ তুলে দেয়ায় এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির শুরু হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন গু।

গু’র অভাবনীয় সফলতা নিয়ে সম্প্রতি ব্লুমবার্গে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন সব তথ্য উঠে আসে।

শীর্ষ প্রতিষ্ঠান আইএইচএমই-র দেয়া তথ্য প্রতিদিনই দেশটির মহামারিবিষয়ক সবশেষ প্রতিবেদন হিসেবে হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশ করতেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

আইএইচএমই’র দেয়া তথ্যকে প্রাধান্য দিয়ে দেশটির শীর্ষ সংক্রমক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসি জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ হাজারের মধ্যে আটকে যাবে। তা কখনোই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়া অতিরঞ্জিত তথ্য ১ লাখ বা ২ লাখের ঘর ছোঁবে না।

গেল ২২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে মৃত্যু ৫ লাখ ছাড়িয়েছে।

এদিকে, আইএইচএমই কর্তৃপক্ষ তাদের গবেষণালব্ধ তথ্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয় গোটা বিশ্বে। তারা জানায় জুলাইতে কোভিডে মৃত্যু নেমে আসবে শূন্যের কোটায়।

জুনে প্রকাশিত আইএইচএমই-র এমন অবিবেচক উপাত্তভিত্তিক গবেষণা আহত করেছে গু’র মতো অনেককে। গু তার মডেলে জানান জুলাইতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিনকার মৃত্যুর টালি লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ১,০০০ থেকে ১,৫০০-এর মধ্যে উঠানামা করবে।

মে মাসের শেষ দিক থেকে গু’র দেয়া তথ্যের প্রতি মার্কিনিদের আগ্রহ বাড়তে থাকে। প্রতিদিন কয়েক কোটি নাগরিক গুর ওয়েবসাইটে হুমড়ি খেয়ে পড়তে থাকেন। করোনাভাইরাস ইস্যুতে সরকারের রাখঢাক নয়, আসল অবস্থা জানতেই কোটি নাগরিক আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করতে থাকে তার মডেলের তত্ত্ব ও উপাত্তকে।

ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের বায়োলজির অধ্যাপক কার্ল বার্গস্ট্রোম টুইট বার্তায় গু’র দেয়া তথ্যের প্রতি আস্থা জানায়।

দেশটির শীর্ষ প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) তাদের ওয়েবসাইটে গু’র দেয়া তথ্যও প্রকাশ করতে থাকে। এরই মধ্যে সিডিসি’র নিয়মিত বৈঠকে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে অংশ নিতে থাকেন ক্যালিফোর্নিয়ায় বড় হয়ে ওঠা চীনা যুবক গু।

ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটসের সহযোগী অধ্যাপক নিকোলাস রেইকসের করা এক জরিপে দেখা যায় করোনা ইস্যুতে এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যে দেশজুড়ে ৫০ জনপ্রিয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছিলো গু’র ওয়েবসাইট।

নভেম্বরে গু দেখতে পেল বিশ্বের সুনামধন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া মডেলগুলোতে অসামঞ্জস্যতা কমে এসেছে। মডেলগুলো জনগণের কাছ থেকে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেতে শুরু করেছে। অবাস্তব ও অনুমানপ্রসূত উপাত্তের পরিবর্তে তাদের তথ্যে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে দায়িত্বশীলতার প্রকাশ। এমন অবস্থায় গু নিজে থেকেই কোভিড সংক্রান্ত আগাম মৃত্যুর উপাত্ত প্রকাশ করা থেকে ইস্তফা নেন।

এই উপাত্তবিষয়ক ইঞ্জিনিয়ার যখন বুঝতে পেলেন সব দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে শুরু করেছেন, তখন তাদের খাটো করার আর দরকার নেই। তাদের শুধরে দেয়াই ছিলো তার মূল লক্ষ্য। আর যখন তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন, তখন তিনি উপলব্ধি করেন মিশন সফল হয়েছে।

আসলে কীভাবে সঠিক প্রমাণিত হতো গুর উপাত্ত। এমন প্রশ্নের উত্তরে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন জানিয়েছে রাজনীতিসহ সব ধরনের প্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত রেখে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত মৃত্যুবিষয়ক উপাত্তগুলোকে নিরপেক্ষভাবে পর্যালোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেয়াই ছিল গু’র সফলতার মূল চাবিকাঠি।

এ বিভাগের আরো খবর