দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের মেয়ে শেইখা লতিফাকে বাড়িতে রেখে দেখভাল করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের লন্ডন দূতাবাস।
রাজকুমারীর নিখোঁজ থাকার খবর সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রচার হলে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বিবৃতি পাঠিয়ে রাজকুমারী ভালো আছেন বলে দাবি করে রাজপরিবারটি।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আসল পরিস্থিতি উঠে আসেনি বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।
‘তার পরিবার নিশ্চিত করছে, বাড়িতে রাজকুমারীর যত্ন নেওয়া হচ্ছে। তাকে তার পরিবার ও চিকিৎসকরা দেখাশোনা করছেন। তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে এবং উপযুক্ত সময়ে তিনি সামাজিক জীবনে ফিরবেন বলে আশাবাদী আমরা।’
লতিফার বাবা শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রপ্রধানদের একজন। দুবাইয়ের শাসক হওয়ার পাশাপাশি তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি শাসনব্যবস্থায় ভিন্নমত মেনে নিতে পারেন না। তার বিচারব্যবস্থাও বৈষম্যমূলক।
এমন প্রেক্ষাপটে নতুন জীবনের আশায় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুবাই থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন লতিফা। পরে বন্ধুদের কাছে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি নিজের বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। বলেন, তাকে ‘জিম্মি' করে রাখা হয়েছে এবং তিনি নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন।
শেখ পরিবারে বাড়ি পালানোর ঘটনা এই প্রথম না। ২০০২ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন লতিফা। সে সময় আমিরাত-ওমান সীমান্ত থেকে ধরে নিয়ে আসা হয় লতিফাকে। তার আগে ২০০০ সালে লতিফার বড় বোন শামসা বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। এক মাস পর তাকে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ থেকে আটক করে দুবাই ফেরত আনা হয়েছিল।
বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানকে ওই ফুটেজ সরবরাহ করেন রাজকুমারী লতিফা আল মাকতুমের বন্ধুরা। সেখানে রাজকুমারী বলেন, তিনি নৌকায় করে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারত মহাসাগর থেকে কমান্ডোরা তাকে অচেতন করে আবার 'বন্দিশালায়' নিয়ে আসেন। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন। বাথরুম থেকে বন্ধুদের কাছে গোপনে ভিডিও পাঠিয়ে তিনি তার বন্দিদশার কথা জানান। তবে হঠাৎ করে সেই গোপন ভিডিও আসাও বন্ধ হয়ে যায়।
এ অবস্থায় জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করেন লতিফার বন্ধুরা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে জাতিসংঘকে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এবার সে আহ্বানে সাড়া দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন।
হাইকমিশনারের কার্যালয় লতিফার বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নিচ্ছে। বিবিসি জানিয়েছে, লতিফার ভিডিওগুলো বিশ্লেষণের পর জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন আরবিটারি ডিটেনশনের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু করা হবে।